আপনজন ডেস্ক: ময়নাগুড়িতে আপ বিকানের এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে হল ৯। যিদিও এই সংখ্যাটা আরও বাড়তে পারে। তবে, দুর্ঘটনাস্থল ঘুরে কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি কথা বলেছেন দুর্ঘটাগ্রস্ত ট্রেনের লোকো পাইলট ও রেলের কর্তাদের সঙ্গে।
রাতভর শীতের মধ্যে লাইট জ্বালিয়ে উদ্ধার কাজ চলতে থাকে। শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, জলপাইগুড়ি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল থেকে এক জনকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আশঙ্কাজনক অবস্থায় স্থানান্তরিত করা হয়েছে। জলপাইগুড়ি, ময়নাগুড়ি ও উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এখনও পর্যন্ত ৪৩ জন ভর্তি রয়েছেন। তাঁদের অনেকেরই অবস্থা আশঙ্কাজনক।
আহতরা হাসপাাতলের বেডে শুয়ে বলছেন, তারা কিছুতেই দুর্ঘটনার আগের মুহূর্তের স্মৃতি ভুলতে পারছেন না।
যদিও এদিন দুর্ঘটনাগ্রস্ত বিকানের-গুয়াহাটি এক্সপ্রেসের লোকো পাইলট প্রদীপ কুমার জানিয়েছেন ঘণ্টায় প্রায় ১০০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেনটি চলার সময় দুর্ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে তিনি বলেন, তিনি বলেন, ‘তখন ১৬টা বেজে ৫২-৫৩ মিনিট হবে। আচমকাই একটা ভীষণ ঝাঁকুনি অনুভব করি। তারপরই ইমার্জেন্সি ব্রেক কষি। পিছনে কী হচ্ছে, আমার পক্ষে জানাটা সম্ভব ছিল না। যখন দেখি, তখন পিছনের ৬ চাকা লাইনচ্যুত হয়েছিল। কারণ আমি গাড়ি চালাচ্ছিলাম। ট্র্যাকশন মোটর খোলা ছিল কিনা, সেটা জানা আমার পক্ষে কোনওপক্ষেই সম্ভব নয়। তখন ইমার্জেন্সি ব্রেক কষে ট্রেন থামাতে হয়।’
লোকো পাইলটের বক্তব্যের পর প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে তাহলে কি ট্র্যাকশন মোটরের কোনও গণ্ডগোল ছিল? জানা যাচ্ছে, ইঞ্জিনের চাকাকে রেললাইনে ধরে রাখা এবং চাকা ঘোরাতে সাহায্য করা ট্র্যাকশন মোটর দুর্ঘটনার আগে ভেঙে যায়। যার ফলে ইঞ্জিনের চাকা লাইনচ্যুত হয়। এরপর পর পর একের পর এক কামরা বেলাইন হয়ে যায়। ট্র্যাকশন মোটর ভেঙে যাওয়ার ফলেই প্রচণ্ড ঝাঁকুনি অনুভব করেন চালক এবং সহকারী চালক। ট্রেনের গতি ১০০ কিমি প্রতি ঘণ্টা থাকায় কামরাগুলি একটা আরেকটার ঘাড়ে উঠে যায়।
দুর্ঘটনাগ্রস্ত এক যাত্রী সঞ্জয় এক সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‘বিকেল পাঁচটার সময় আমি তখন ট্রেনের মধ্যে। বউয়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলছিলাম। হঠাৎ প্রচণ্ড জোরে আওয়াজ হল। তার পর তীব্র ঝাঁকুনি, আমি নিজের বার্থ থেকে পড়ে যাই। চোখের সামনে সব অন্ধকার হয়ে যায়। জ্ঞান ফিরতে দেখলাম একটা অ্যাম্বুল্যান্সের মধ্যে রয়েছি।’
তবে, মনোহর পাল নামে এক স্থানীয় ব্যক্তি দাবি করেছেন, তিনিই প্রথম দুর্ঘনাগ্রস্ত এলাকায় পৌঁছান। তিনি জানান, রেললাইনের কাছেই একটি চায়ের দোকানে বন্ধুদের সঙ্গে বসে আড্ডা মারছিলাম। ট্রেন বেলাইন হওয়ার তীব্র শব্দ শুনতে পেয়ে সবার প্রথম সেখানে ছুটে যাই। প্রথমে ভেবেছিলাম মনে হয় কোনও বিস্ফোরণ হয়েছে। তার পর ছুটে এসে দেখি ট্রেনের কামরাগুলি খেলনার মতো ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে। তার মধ্যে থেকে মানুষের আর্তনাদ শুনতে পাই। তখনই তাঁদের বের করতে শুরু করি।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct