ফৈয়াজ আহমেদ: ইনস্টাগ্রাম, বর্তমান বিশ্বের অন্যতম সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্ম। তুমুল জনপ্রিয় কিছু সোশ্যাল সাইট, যেমন; ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ইউটিউব, মেসেঞ্জারের সাথে ইনস্টাগ্রামকে এক কাতারে দাঁড় না করালে, জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের তালিকা যেন অপূর্ণই থেকে যায়। ইনস্টাগ্রাম ইমেজ শেয়ারিং সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের আধিপত্য বিস্তারের পাশাপাশি, স্মার্টফোন ভিত্তিক সোশ্যাল মিডিয়াগুলোর মধ্যে ফাস্টেস্ট গ্রোয়িং প্ল্যাটফর্ম। Backlinkco এর এক আর্টিকেল অনুযায়ী, ২০২১ সালের ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১.৩৮৬ বিলিয়ন সক্রিয় ব্যবহারকারী নিয়ে বিশ্বের সোশ্যাল মিডিয়াগুলোর মধ্যে ইনস্টার অবস্থান বর্তমান অবস্থান চতুর্থ।
ইতিহাস
২০০৯ সালে ২৭ বছর বয়সী কেভিন সিস্ট্রম Nextstop নামে একটি ট্রাভেল রেকোমেন্ডেশন স্টার্টআপে কর্মরত ছিলেন। তখন তার মাথায় নতুন এক অ্যাপের ভাবনা উদ্ভব হয়। ধারণাটি ছিল এ রকম, তৈরি করা অ্যাপে Location Check-in এর পাশাপাশি বন্ধুদের সাথে Future Meetup Plan এবং Meetup Picture Post ধরনের কিছু ফিচার থাকবে।
স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে গ্র্যাজুয়েট হওয়া কেভিন সিস্ট্রমের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও কোডিংয়ে পূর্ব কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না। তবে কর্পোরেট ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েট হিসেবে সিস্ট্রম আগে অবশ্য গুগলে কাজ করেছেন। তাই কেভিন তার সাপ্তাহিক ছুটির পাশাপাশি অবসর সময়গুলো খুঁজে বের করে কোডিং শিখতে থাকেন। কোডিং চর্চার একপর্যায়ে তিনি Burbn নামে একটি ওয়েব অ্যাপ প্রোটোটাইপ তৈরি করে ফেলেন। ২০১০ সালের মার্চ মাসে সিলিকন ভ্যালি ভিত্তিক একটি স্টার্ট-আপ পার্টিতে যোগ দিলে, সেখানে ‘Baseline Ventures’ এবং ‘Andreessen Horowitz’ নামক দুইটি ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফার্মের বিনিয়োগকারীদের সাথে পরিচিত হন তিনি। সে পার্টিতেই কেভিন দুইজনকে Burbn এর প্রোটোটাইপ দেখান। প্রোটোটাইপ দেখে পছন্দ হয়ে যাওয়ায় তারা অ্যাপটির ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশের সাথে পরবর্তী মিটিংয়ের সময় ও জায়গা নির্ধারণ করে দেন। দুই বিনিয়োগকারীর সাথে দীর্ঘ মিটিংয়ের পর কেভিন Nextstop এর চাকরি থেকে ইস্তফা নিয়ে পরিপূর্ণ মনোযোগ ঢালেন Burbn এর দিকে।
দুই সপ্তাহের মধ্যেই দুই ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফার্ম থেকে তিনি ৫০০,০০০ মার্কিন ডলার সিড ফান্ডিং নিতে সক্ষম হন। ফান্ডিং পাবার পরপরই তিনি একটি পরিপূর্ণ দল গঠনের কথা চিন্তা করেন। স্ট্যানফোর্ডে অধ্যয়নের সময় ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষার্থী মাইকেল ক্রেইগারের সাথে পরিচয় হয়েছিল তার। কেভিন Burbn কে পরিপূর্ণ একটি কাঠামোতে দাঁড় করানোর জন্য ক্রেইগারকে দলে ভিড়িয়ে নেন।
ক্রেইগার এর আগে ‘Meebo’ নামে একটি সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্মে ‘ইঞ্জিনিয়ার’ এবং ‘ইউজার এক্সপেরিয়েন্স ডিজাইনার’ হিসেবে কাজ করছিলেন। দুইজন মিলে Burbn নিয়ে আরও চুলচেরা বিশ্লেষণ চালিয়ে যান। গবেষণায় মোট তিন দিকে ফোকাস রেখেছিলেন তারা। সেগুলো হলো Check-in, Meetup Plan এবং Photo Sharing।
ব্যবহারকারীদের মাঝে ‘Check-in’ এবং ‘Meetup’ প্ল্যানের চেয়ে ‘Photo Sharing’ দিকটি বেশি জনপ্রিয়- গবেষণায় মূলত এই ফলাফলটি উঠে আসে। এজন্য তারা মোবাইলে তোলা ছবি এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ারকৃত ছবি নিয়ে বিস্তর ঘাটাঘাটি শুরু করেন। প্রথমেই তাদের তত্ত্বানুসন্ধানের মূল বিষয় হয় বাজারে থাকা ফটোগ্রাফি অ্যাপগুলো। সেসময় তাদের নজরে আটকে যায় ‘Hipstamatic’ নামে একটি ডিজিটাল ফটোগ্রাফি অ্যাপের দিকে, যা সেসময় মার্কেটে বেশ জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছিল। অ্যাপটিতে বিভিন্ন নজরকারা ফিল্টার থাকলেও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবি শেয়ারের কোনো অপশন ছিল না তাতে। তারা ভাবলেন, এমন একটি অ্যাপ তৈরি করা দরকার, যা দিয়ে ফিল্টারকৃত ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করা যাবে।
সেই সূত্র ধরে তারা ‘Hipstamatic’ ও ‘Facebook’ এর বৈশিষ্ট্যের সমন্বয়ে একটি অ্যাপ তৈরি করেন। পরবর্তীতে অ্যাপটির নাম পরিবর্তন করে Instagram রাখা হয়। Instagram শব্দটি মূলত ‘Instant Camera’ এবং ‘Telegram’ শব্দের কম্বিনেশন।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct