জয়প্রকাশ কুইরি, পুরুলিয়া: পুলিশ বাবা’র সাহায্যে, ফার্স্ট ক্লাস অনার্স পাশ করে রেকর্ড করল বাংলার এক শবর কন্যার। ৬২ শতাংশের বেশি নাম্বার নিয়ে, হিন্দি অনার্স পাশ করে গোটা বাংলাকে তাক লাগিয়ে দিল শকুন্তলা শবর। পুরুলিয়ার বরাবাজার থানার ফুলঝোর গ্রামের বাসিন্দা এই মেয়ের কীর্তিতে চমকে গেছে বাংলার শিক্ষাজগত। শকুন্তলা শবর পরিবারে তিন বোন দুই ভাই। বাবা মঙ্গল শবর দিনমজুর লোকের বাড়িতে কাজ করেন। মা উর্মিলা শবর জঙ্গলের কাঠ-পাতা কুড়িয়ে লোকের বাড়িতে বিক্রি করেন। এই ভাবেই চলে তাদের সংসার।
কিন্তু ছেলেমেয়েদের পড়াশোনায় কোনদিন অসুবিধা হতে দেননি।
এই শবর পরিবারের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন পুরুলিয়ার ‘শবর বাবা’। পুরুলিয়ার শবর বাবা অর্থাৎ কলকাতা পুলিশের ট্রাফিক গার্ড অরূপ মুখোপাধ্যায়। যিনি কলকাতার ট্রাফিক গার্ডের কাজের পাশাপাশি পুরুলিয়ার পুঞ্চায় নিজের বাড়ির কাছে গড়ে তুলেছেন শবরদের জন্য স্কুল। এই স্কুলে বিনা পয়সায় থাকা-খাওয়া ও পড়াশোনা করে প্রায় দেড়শো জন শবর ছেলে-মেয়ে। শকুন্তলা শবরের পরিবারের দিকেও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন অরূপ মুখোপাধ্যায়।
অন্যদিকে, শকুন্তলার বাবা-মার সবসময় ইচ্ছা তাঁদের ছেলে-মেয়েরা পড়াশোনা করে মানুষ হোক। মাধ্যমিক পাশ শবর মানুষ এখনও বাংলার মানুষের কাছে আশ্চর্যর বিষয়! সেখানে শবর সম্প্রদায়ের কোন পরিবার থেকে তিন-তিনজন মাধ্যমিক পাস ছেলে-মেয়ে পাওয়া অবাক করার বিষয়! কিন্তু উর্মিলা দেবী তার ছেলে-মেয়েদের পড়ানোর গুরুত্বটাই বেশি করে দিয়েছেন। পরিবারের ছোট ছেলে এবং ছোট মেয়ে এখন অরূপ মুখোপাধ্যায়ের পুঞ্চা নবদিশা মডেল স্কুলে থেকে পড়াশোনা করছে। এই শবর পরিবারের ছোট মেয়ে এবার মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসবে। আগামী বছর ছোট ছেলে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিল। মেজ মেয়ে বাসুমতী শবর ইংরেজি অনার্সে দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। বড় ছেলে উচ্চ-মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে ২০২২ সালে। কিছু অসাধারণ মানুষের সাহায্যে এই পরিবারের সবার পড়াশোনার সমস্ত খরচা চালান পুরুলিয়ার ‘শবর পিতা’ অরুপ মুখোপাধ্যায়। এই শবর পরিবারের পড়াশোনা, খাওয়া-দাওয়া কোনকিছুর অসুবিধা হতে দেননি অরুপ। বিশেষ করে পরিবারের ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনার জন্য উদ্যোগী ছিলেন তিনি। তাই, শকুন্তলা শবরের এই কৃতিত্বে, বাবা মঙ্গল শবর ও মা উর্মিলা শবরের পাশাপাশি খুশির আনন্দ অরূপ মুখোপাধ্যায়ের পরিবারেও।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct