আপনজন ডেস্ক: ত্রিপুরায় সাম্প্রদায়িক হিংসার প্রকৃত তথ্য তুলে ধরতে গিয়ে এফআইআর-এর কবলে পড়লেন দুই তরুণী সাংবািদক সমৃদ্ধি সাকুনিয়া ও স্বর্ণ ঝা। বিশ্ব হিন্দু পরিষদের এক সমর্থকের দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে অসম সরকার দুই মহিলা সাংবাদিককে আটক করেছে। এ ব্যাপারে সমৃদ্ধি সাকুনিয়া ট্যুইট করে জানিয়েছেন, আসামের করিমগঞ্জের নীলামবাজার থানায় তাদের আটক করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, গোমতি জেলার এসপি আটকের আদেশ দিয়েছেন।
ত্রিপুরা পুলিশ জানিয়েছে, এই মামলা প্রসঙ্গ এসেছে সমৃদ্ধি সাকুনিয়ার এক ট্যুইটকে কেন্দ্র করে যেখানে যিনি এক ব্যক্তির অর্ধ পোড়া বাড়ির প্রার্থনা স্থল পরিদর্শন করে দািব করেছিলেন সেখানে কুরআন পোড়ানো হচ্ছে।পুলিশ বলছে, তারা জানতে পেরেছে সেখানে ধর্মীয় নথি পোড়ানো হয়নি। তাই সাংবাদিকদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আগরতলায় আসতে বলা হয়েছে। তারা রাজ্য ছেড়ে চলে যেতে পারেন জানতে পারার পরই তাদের আটক করা হয়েছিল।
দুই সাংবাদিক গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, বিমানবন্দরে যাওয়ার সময় পুলিশ তাদের আটক করে। থানায় সাড়ে তিন ঘণ্টা পর ত্রিপুরা থেকে এসকর্ট টিম আসে। তারা বলেন, আমরা তাদের অপেক্ষা করতে বলেছিলাম আমাদের আইনজীবী বিমানবন্দরের পথে আসছেন। কিন্তু তারা জোরের সঙ্গে বলে, ‘কেউ আসছে না’। তারা আমাদের আদেশের অনুলিপিও দেখায়নি। এদিন সকালে সাংবাদিকরা বলেন, পুলিশ তাদের সাথে দেখা করে তাদের “ভয় দেখানোর” চেষ্টা করেছে। তারা জানিয়েছে যে তাদের হোটেল ছেড়ে আগরতলায় যেতে পারবে না।
সূত্র জানায়, পুলিশের একটি দল সাংবাদিকদের “নোটিশ” দিয়েছে এবং ২১ নভেম্বর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য উপস্থিত হতে বলেছে। সূত্রটি আরও জানিয়েছে যে একটি ভুয়া সংবাদ প্রচার মামলায় তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে।এইচডব্লু নিউজ নেটওয়ার্ক যেখানে ওই সাংবাদিক কাজ করে তার এক বিবৃতিতে বলেছে, পুলিশ তাদের বিবৃতি রেকর্ড করার জন্য এক সপ্তাহের সময় দেওয়ার পর তাদের হোটেল ছেড়ে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। এটি ত্রিপুরা পুলিশের পক্ষ থেকে নিছক হয়রানি নয়, সংবাদমাধ্যমকে নিশানা করা। অন্যদিকে, এডিটরস গিল্ড অফ ইন্ডিয়া ট্যুইট করে বলেছে, তারা এই গ্রেপ্তারের নিন্দা করে। তাদের অবিলম্বে মুক্তি এবং অবাধে ঘোরাফেরার স্বাধীনতা দেওয়ার দাবি করেন।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বিশ্ব হিন্দু পরিষদের একটি সমাবেশের সময় ত্রিপুরার একটি মসজিদে ভাংচুর করা হয়েছে বলে অভিযোগ সোশ্যাল মিডিয়ায় টুইট ছড়িয়ে পড়ে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক তা অস্বীকার করে বলেছে যে প্রতিবেদনগুলি ভুয়া এবং “তথ্যের সম্পূর্ণ ভুল উপস্থাপনা”। কাকরাবানের দারগাবাজার এলাকার মসজিদটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। তবে এই ভুয়া সংবাদের পর মহারাষ্ট্রে বিক্ষোভ ও সহিংসতার খবর পাওয়া গেছে বলে মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। ত্রিপুরা পুলিশের পক্ষ থেকে ফেসবুক, টুইটার এবং ইউটিউবকে একশটিরও বেশি অ্যাকাউন্টের বিশদ বিবরণ দিয়েছে যেখান থেকে পোস্টগুলি শেয়ার করা হয়েছিল বলে অভিযোগ করা হয়েছে। ত্রিপুরা পুলিশ এই পদের জন্য সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী, কর্মী এবং ধর্মীয় প্রচারকসহ ৭১ জনের বিরুদ্ধে পাঁচটি মামলা দায়ের করেছে। অন্যদিকে, বিপ্লব দেব সরকারের পুলিশ তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। কুণাল টুইটে জানিয়েছেন, ত্রিপুরা সরকার তার নামে আরও চারটি মামলা দিয়েছে হুবহু এক ধারায়। এ নিয়ে ৯টি মামলা হল। ওরা জয় শ্রীরাম বলে হামলা করবে। আমি সীতার পাতালপ্রবেশ বললে মামলা। আসলে তৃণমূলকে ঠেকাতে হামলা-মামলার ছক বলে তিনি মন্তব্য করেন।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct