নকীবউদ্দিন গাজী, ডায়মন্ডহারবার: জমিদারিত্ব আর নেই তবে জমিদারের কার্যালয় রয়েছে আজও। আর সেখানে রীতিমেনেই আজও আসেন মা দুর্গা। দক্ষিণ ২৪ পরগনার ডায়মন্ড হারবারের বোলসিদ্ধির বারদ্রোনের মন্ডল বাড়ির পুজো ইতিহাসের রুপ কথা যেন ।১৫৬ বছরের এই পুজোতে আজও রয়েছে বিশেষ রীতি। পুজোর অষ্টমিতে একসময় সন্ধিপুজোতে বন্দুক ফায়ার করতো জমিদার মহলের সিংহদ্বারে থাকা দারোয়ানেরা।তবে জমিদারপ্রথা উচ্ছেদের পরই বন্ধ হয়েছে গান ফায়ার কিন্তু নিয়ম করে আজও রয়েছে বিশেষ কিছু রীতি।
মন্ডলবাড়ির পরিবারের সদস্যরা জানান, ১৮৬৬ খ্রীস্টাব্দে তাদের পূর্ব পুরুষ গোলকচাঁদ মন্ডল নুন, সাবান ও ধানের ব্যবসা করে জমিদারিত্ব পত্তন করে বারদ্রোন গ্রামে। পরে জমিদারত্বশাসনে দুর্গার পুজো শুরু করেন গোলকচাঁদ মন্ডলের ৪ ছেলে বাঁমচাঁদ মন্ডল, বামসাগর মন্ডল, বৈকুন্ঠ মন্ডল ও মহেন্দ্রনাথ মন্ডল। সে সময় জমিদারিত্ব থাকায় নাকি ধুমধাম করে হতো পুজো। বিভিন্ন এলাকা থেকে আসতেন পুরোহিত ও প্রজারা। তাদের সেবায় জলপথে গেঁয়োখালি থেকে নৌকাতে করে দই আসতো। সেই সঙ্গে পুকুরের জলে চেটাই পেতে তারউপর চিড়ে, চিনি ভিজিয়ে ও তার সাথে গেঁয়োখালি থেকে আনা দই খাওয়ানো হত প্রজাদের। নিয়ম করে সপ্তমিতে ব্রাম্ভন ভোজন,অষ্টমিতে জ্ঞাতি ও আত্মীয়স্বজন ভোজন ও নবমিতে দারিদ্র্য নারায়ন সেবা করা হতো। এমনকি অষ্টমির দিন দালানবাড়ির সিংহদ্বারে থাকা দারোয়ানেরা বন্দুক ফায়ার করতো সন্ধি পুজোর সময় । তবে কালের ফেরে বন্ধ পশুবলি, হয়না বন্দুক ফায়ার, নেই আর আগের জৌলুশ। তবে আজও মন্ডল বাড়ির পুজোতে সপ্তমিতে হোমের আগুন জ্বালিয়ে নেভানো হয়না দশমী পর্যন্ত।
দিন বদলেছে পরিবার বড়ো হয়েছে মন্ডল পরিবারের এখন পুজো মানেই মন্ডল পরিবারের সকলকে এক সুতোয় বাঁধা পড়া। দেশ বিদেশে পরিবারের সদস্যরা যেখানেই থাক না কেন পুজো কটা দিন গোলকধামের দালানবাড়ির পুজোতে মিলিত হয় সবাই। তবে করোনা পরিস্থিতিতে গত বছর থেকে সবকিছু বদলে দিয়েছে। তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনেই উমার আরাধনা চলছে জোরকদমে এই মন্ডল বাড়ির সদস্যদের।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct