আব্দুস সামাদ মণ্ডল, আরামবাগ ও সঞ্জীব মল্লিক, বাঁকুড়া: রাজ্যের বেশ কয়েকটা জেলা ফের বন্যা কবলিত হওয়ায় ‘ম্যান মেড’ বন্যার তত্ত্বের উপর অনড় থাকলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি শনিবার কয়েকটি জেলায় বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শনের পর বললেন, ডিভিসি যেভাবে জল ছেড়েছে সেটা বড় অপরাধ। মেন মেড ক্রাইম। এবাবে বন্যা হলে মমতা ডিভিসির কাছে ক্ষতিপুরণও চাইতে পারে বলে মুখ্যমন্ত্রী জানান।
মমত আকাশপথে বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন করলেও আরামবাগে নেমে সরেজমিন পরিদর্শন করেন। হেলিকপ্টারে বাঁকুড়ার বন্যাকবলিত এলাকাও ঘুরে দেখেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আকাশপথে এই জেলার বড়জোড়া, সোনামুখী এলাকার বর্তমান পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেন। তবে আরামবাগ পল্লীশ্রী হেলিপ্যাডে নেমে কালিপুর হোরপুর এলাকায় বন্যা পরিদর্শনে যান মমতা। জলের মধ্যে দিয়ে হাঁটেন। জলে দাঁড়িয়েই দূর থেকে বন্যা দুর্গতদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন, বৃষ্টিতে বঙ্গে প্লাবন বিভিন্ন জেলায় বন্যা না বলে গত ৩০ তারিখ নির্বাচনের দিন ৪৯ হাজার কিউসেক জল পাঞ্চেত থেকে আর মাইথন থেকে জল ছাড়ে দুপুর বারোটা নাগাদ। ফের রাতের বেলায় এই দুই জায়গা থেকেই এক লক্ষ কিউসেক জল ছাড়া হয়। একদিকে ঝাড়খণ্ডের জল অন্যদিকে পাঞ্চেত মাইথনের জল এতে প্লাবিত হয়েছে বহু জেলা।
তবে তিনি বলেন, ইতিমধ্যে এক লক্ষ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এদের উদ্ধারকাজে এবং সুবিধার জন্য ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট সহ পঞ্চাশটা টিম ইতিমধ্যে কাজ করছে নবান্নে খোলা হয়েছে ২৪ ঘণ্টার হেল্পলাইন কেন্দ্র।
এদিন বন্যা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে আরামবাগে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন হুগলির জেলাশাসক, মন্ত্রী বেচারাম মান্না, অসীমা পাত্র, আরামবাগ লোকসভার সাংসদ অপরূপা পোদ্দার, প্রাক্তন বিধায়ক কৃষ্ণ চন্দ্র সাঁতরা সহ আরো অনেকে।
আরামবাগে হেলিকপ্টারে নেমে তারপর তিনি সড়কপথে খানাকুল ও গোঘাটের বিস্তীর্ণ এলাকা পরিদর্শন করেন।
এক ভার্চুয়াল সাংবাদিক সম্মেলনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন থেকে জল ছাড়ার কারণে আটটি জেলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চার লক্ষ মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে, এক লক্ষ বাড়ি ধ্বংস করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এটি একটি মানবসৃষ্ট বন্যা। ডিভিসি দ্বারা পরিচালিত হয়। ঝাড়খন্ড সরকার আমাদের বন্ধু। আমি চেয়েছিলাম তারা এই জল ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আমার সাথে এই বিষয়ে আলোচনা করুক। ৩০ সেপ্টেম্বর তারা (ডিভিসি) মাইথন বাঁধে আমাদের কিছু না জানিয়ে জল ছেড়ে দেয়। একই দিনে ঝাড়খন্ড সরকারও জল ছেড়েছিল।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি এ বিষয়ে আরও অভিযোগ করেন, তারা পরের দিন আবার জল ছেড়েছিল এবং ১০ লক্ষেরও বেশি কিউসেক জল ছেড়েদেওয়া হয়েছিল। তিনি জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে এই পদক্ষেপটি ন্যায্য কিনা এবং প্রশ্ন করেছিলেন যে ডিভিসি যখনই মনে হয় তখন এটি করতে পারে কিনা।
মুখ্যমন্ত্রী আরও জানান যে লক্ষ লক্ষ মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে এবং প্রয়োজনীয় ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি বলেন, আমি ঝাড়খন্ড সরকারকেও এই বিষয়টি উত্থাপন করতে বলব। কেন্দ্রীয় সরকারের ডিভিসি পরীক্ষা করা দরকার। আমি এই বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে একাধিকবার চিঠি লিখেছি।
তিনি আরও বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হাজার হাজার কেন্দ্রীয় বাহিনী পাঠাতে পারেন এবং এখানকার প্রতিটি বিজেপি নেতাকে নিরাপত্তা দিতে পারেন, কিন্তু এই ধরনের সময়ে তহবিল বিতরণে অনিচ্ছুক।
তবে, ‘ম্যান মেড’ বন্যার অভিযোগ মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দিলেন এবাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশনের (ডিভিসি) থেকে ক্ষতিপূরণ চাওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।
মমতা জানান, জল ছাড়ার জন্য আটটি জেলায় (দুই মেদিনীপুর, হুগলি, হাওড়া, বীরভূম, বাঁকুড়া এবং দুই বর্ধমান) বন্যা হয়েছে। হাওড়ার উদয়নারায়ণপুর; হুগলিতে আরামবাগ পুরসভা, খানাকুল ব্লক; বাঁকুড়ায় সোনামুখী, বড়জোড়া; পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল; পূর্ব মেদিনীপুরের পটাশপুর; বীরভূমের নানুর; পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রাম-২, কেতুগ্রাম-২ এবং পশ্চিম বর্ধমানের কাঁকসা ব্লকে পরিস্থিতি সঙ্গীন হয়ে উঠেছে। ইতিমধ্যে চার লাখ মানুষকে উদ্ধার করা হয়েছে। এক লাখ বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভারতীয় সেনার আটটি কলাম মোতায়েন করা হয়েছে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct