আপনজন ডেস্ক: বিজেপির কাছে উন্নয়নের মডেল হিসেবে আর গুজরাত নয়, উত্তরপ্রদেশ। তাই উত্তরপ্রদেশে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচন উপলক্ষে সেই উন্নয়নের প্রচারে নামতে শুরু করে বিজেপি। কিন্তু প্রচারের শুরুতে হোঁচট খেল বিজেপি। ইংরেজি দৈনিক দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে যোগী আদিত্যনাথের শাসনামলে উত্তরপ্রদেশে যে উন্নয়নের জোয়ার তা দেখাতে একটি বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হয়। রোববার প্রকাশিত বিজ্ঞাপনটিতে উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের বক্তব্যে ওই রাজ্যে উন্নয়নের খতিয়ান তুলে ধরা হয়েছে, সঙ্গে এক পাতাজুড়ে তাঁর একটি ছবিও রয়েছে। ওই বিজ্ঞাপনে বলা হয়, ভারতের রাজ্যগুলোর প্রবৃদ্ধির ভিত্তিতে উত্তরপ্রদেশ ভারতের দ্বিতীয় ধনী রাজ্য। কিন্তু সেই বিজ্ঞাপনের নিচে যে ছবি ছাপা হয়েছে, তা উত্তর প্রদেশের নয়, কলকাতার ‘মা’ উড়ালপুলের। কলকাতার পার্ক সার্কাস-ইস্টার্ন মেট্রোপলিটন বাইপাস সংযোগকারী শহরের দীর্ঘতম ফ্লাইওভারটি যেখানে বিমানবন্দরের দিকে ঘুরছে, সেই অঞ্চলের ছবি দেওয়া হয়েছে। এমনকী হলুদ ট্যাক্সি যা কলকাতা শহরের পরিবহণের প্রতীক তাকেও উড়ালপুলের উপরে দেখা যাওয়ায় তৃণমূল কংগ্রেস নেতারা নিশ্চিত হয়ে যান ছবিটি কলকাতার মা উড়ালপুলের। এরপর তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাতক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে মুকুল রায় কেউই যোগী সরকারকে কটাক্ষ করতে বাদ যায়নি। পরিস্থিতি বুঝে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের পক্ষে বিজ্ঞাপন প্রকাশের জন্য ক্ষমতা চাওয়া হয়। ততক্ষণে সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমে বিয়ষটি নিযে প্রচার শুরু হয়ে যায়। লেখা হতে থাকে, ‘মা ফ্লাইওভার’ নামের এই উড়ালপুলটি কয়েক বছর আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উদ্বোধন করেছিলেন। বাইপাসের ওপর যেখানে উড়ালপুলটি বাঁ দিকে বাঁক নিয়ে বিমানবন্দরের দিকে গেছে, সেই অংশের বাঁ দিকে বেশ কিছু পাঁচতারা হোটেল ও বহুতল ভবন রয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই জায়গাটি ঝকঝকে। সম্ভবত আলামি স্টক ফটো থেকে ছবিটি নেওয়া হয়েছে। কারণ, একই ছবি আলামি স্টক ছবিতে আছে। এই ছবি টাকার বিনিময়ে বব্যহার করা হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে েসটাই হয়েছে বলে ধারাণা। বিজ্ঞাপনে এই অংশটি উত্তরপ্রদেশ বলে প্রকাশিত হওয়ায় সামাজিক মাধ্যমে সমালোচনার সৃষ্টি হয়। তৃণমূল কংগ্রেসও ইতিমধ্যে বিষয়টিকে ইস্যুতে পরিণত করতে মাঠে নেমে পড়েছে।
তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এ নিয়ে টুইট করেন। এক টুইট বার্তায় তিনি বলেন, ‘উত্তর প্রদেশকে পাল্টে ফেলার অর্থ এখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে বাংলার পরিকাঠামোগত উন্নয়নকে চুরি করে ওই রাজ্যের উন্নয়ন বলে প্রমাণ করার চেষ্টা। বিজেপির প্রস্তাবিত “ডবল ইঞ্জিন মডেল” (রাজ্য ও কেন্দ্রে একই দলের সরকার থাকলে উন্নতি দ্রুত হয়—এই বক্তব্য) সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়ে গেছে। তাদের সবচেয়ে শক্তিশালী রাজ্যের ভাঁওতা আজ প্রকাশ্যে বেরিয়ে এসেছে।’
রোববার দুপুরের দিকে দেখা যায় টুইটারে ‘মা ফ্লাইওভার’ এই শব্দবন্ধ ট্রেন্ডিং করছে। ফেসবুকও সয়লাব এই বিজ্ঞাপন ও সংশ্লিষ্ট মন্তব্যে।
নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফরহাদ হাকিম বলেন, এর আগে বিজেপি পশ্চিমবঙ্গ সম্পর্কে ভুল তথ্য ছড়ানোর জন্য তাদের রাজ্যের আইন শৃঙ্খলার ব্যর্থতার ছবি ব্যবহার করেছিল। এখন তারা #MamataBanerjee নেতৃত্বে নির্মিত ফ্লাইওভারের ছবি ব্যবহার করে ইউপিতে “উন্নয়নের” জন্য বিজ্ঞাপন দেয়।
ইতিমধ্যে সর্বভারতীয় সংশ্লিষ্ট দৈনিকটি কলকাতার ছবি উত্তর প্রদেশের উন্নয়নের চিত্র বলে প্রচার করার জন্য ক্ষমা চেয়েছে। তারা লিখেছে, ‘অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য আমরা ক্ষমাপ্রার্থী। ছবিটি যাবতীয় ডিজিটাল সংস্করণ থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।’
এ নিয়ে দক্ষিণ কলকাতার এক হোটেলে সাংবাদিক বৈঠক করেন তৃণমূলের রাজ্যসভার দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন। সঙ্গে ছিলেন তৃণমূলের মুখপাত্র সমীর চক্রবর্তীও। তারা প্রবলভাবে আক্রেমণে নামেন যোগী সরকারের এই ‘প্রচারণা’ নিয়ে। ডেরেক যোগী সরকারের কটাক্ষ করে বলেন, উত্তরপ্রদেশ সরকার তো একটি উন্নয়নের বিজ্ঞাপন দিয়েছে। তাদের পরামর্শ দিচ্ছি আরও কয়েকটি এই ধরনের বিজ্ঞাপন প্রকাশ করার। কারণ তারা ভোটের কয়েক মাস আগে যোগী উন্নয়নের প্রকৃত মডেলের সন্ধান পেয়েছেন।’ তা সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে সামনে এসেছে।
বিজেপি অবশ্য পুরো দায় সংবাদপত্রের ঘাড়ে ফেলেছে। পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভায় বিরোধী দল নেতা বিজেপির শুভেন্দু অধিকারী এ নিয়ে কথা বলেন। সামাজিক মাধ্যমে তিনি বলেন, যোগী আদিত্যনাথের সরকার উত্তর প্রদেশে প্রভূত উন্নয়ন করেছে এবং প্রবৃদ্ধির রাস্তায় রাজ্যকে নিয়ে গিয়েছে। ফলে তাদের এমন একটি রাজ্যের ছবি ছাপানোর দরকার নেই, যা ঋণগ্রস্ত, যেখানে প্রশাসন ভেঙে পড়েছে। একটি সংবাদপত্রের ভুলকে আশ্রয় করে ভুয়া প্রচারের রাস্তায় নেমেছে এরা (তৃণমূল)।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct