আপনজন ডেস্ক: মুসলিম হয়ে দোকানের নাম দেবতার নামে কেন এই অভিযোগ তুলে উত্তরপ্রদেশের মথুরার বিকাশ বাজারে একটি ধোসা বিক্রেতার দোকান ভাঙচুর করল একদল উগ্র হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীর লোকজন। ইরফান নামে এক যুবক ‘শ্রীনাথ ধোসা কর্নার’ নামে এক দোকান চালাতেন মথুরার বিকাশ মার্কেটে। ওই এলাকায় দক্ষিণ ভারতের খাবার ধোসার দোকানটি অচিরেই ‘জনপ্রিয়’ হয়ে ওঠে। কিন্তু তা মেনে নিতে পারেনি সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী। তারা সেই ধোসার দোকানটিতে ভাঙচুর চালায় এই অভিযোগে যে হিন্দুদের দেবতার নামে একজন মুসলিম দোকান চালচ্ছে, এটা চলতে দেওয়া যাবে না। এর জেরে রাতারাতি সেই দোকানের নাম পরিবর্তন করে রেখে দিল ‘আমেরিকান ধোসা কর্নার’। তবে, তার এই দোকান ভাঙার ঘটনার ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়ায় মথুরার পুলিশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার চেষ্টার অভিযোগ অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তিদের নামে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এই সপ্তাহে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া ভিডিওটিতে দোকানটির বাইরে কয়েকজন ব্যক্তিকে বলতে শোনা যায়: ‘কৃষ্ণ ভক্তরা যুদ্ধ করো, মথুরাকে শুদ্ধ করো’। তারপর তারা বলতে তাকে, হিন্দু দেবতার নামে দোকান হওয়ায় হিন্দুরা ভুল ভেবে এই দোকানে আসবে। একজন মুসলিমের দোকান হিন্দু দেবতার নামে চলবে না।
এরপর দোকানটির মালিক ইরফান কোতোয়ালি থানায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেন।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এখন পর্যন্ত তাদের তদন্তে দেখা গেছে যে ধোসা স্টলের একজন প্রতিযোগী পবন যাদব, যিনি সম্প্রতি একই নামে (শ্রীনাথজি সাউথ ইন্ডিয়ান ধোসা কর্নার) ভিকাস মার্কেটে একটি রেস্তোরাঁ শুরু করেছিলেন, তিনি হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীকে ইরফানের স্টল সম্পর্কে অবহিত করেছিলেন। তার জনপ্রিয়তাকে নস্যাৎ করতে এই চক্রান্ত বলে পুলিশের ধারণা।
তবে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্থানীয় উত্তরপ্রদেশ পুলিশের এক অফিসার সংবাদমাধ্যমকে বলেন, মুসলিম লোক দ্বারা পরিচালিত ধোসার স্টল বেশি জনপ্রিয়। তার ধোসা হিন্দু স্টলের তুলনায় দৃশ্যত সস্তা ছিল। যদিও আমরা এখনও তদন্ত করছি, আপাতত মনে হচ্ছে যাদবই হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীকে অবহিত করেছিলেন এবং তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বীকে পরিত্রাণ পেতে চেয়েছিলেন।
ইরফানের তিন ভাইয়ের একজন জাভেদ এই ঘটনার জন্য যাদবকে দায়ী করেছেন। তিনি বলেন, আমার ভাই ও আমি এই স্টলটি পাঁচ বছর ধরে কোন সমস্যা ছাড়াই চালাচ্ছি। কিন্তু গত আড়াই মাস ধরে ঝামেলা চলছে। একটি নতুন ধোসার দোকান খোলার কারণে, দুটি স্টল একে অপরের থেকে ২৫ মিটার দূরে অবস্থিত।
কোতোয়ালি থানার এসএইচও সুরজ প্রকাশ শর্মা জানান, পুলিশ বর্তমানে মামলাটি তদন্ত করছে এবং অপরাধীদের চিহ্নিত হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা এলাকা থেকে সিসিটিভি ফুটেজ তুলে নিয়েছি এবং ভাইরাল ভিডিওতে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করার চেষ্টা করছি।
মথুরা পুলিশ ডিএসপি বরুণ কুমার সিংয়ের টুইটারে একটি বিবৃতিও পোস্ট করেছেন। তাতে বলেছেন বিকাশ বাজারে শ্রীনাথ ধোসা কর্নারে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের একটি দল আপত্তিকর শব্দ ব্যবহার করেছিল। পুলিশ বর্তমানে বেনামি ব্যক্তিদের তথ্য সংগ্রহ করছে এবং স্টলের মালিক এবং শ্রমিকদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct