আপনজন ডেস্ক: পিছিয়ে পড়া জেলা পুরুলিয়ায় উচ্চ শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে সেখানে রাজ্য সরকারের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সিধো কানহো বিরসা বিশ্ববিদ্যালয়। এর ফলে পুরুলিয়া ছেলেমেয়েদের আর অন্য জেলায় উচ্চ শিক্ষার জন্য তেমন ছুটতে হয় না।
গত ২০২১১ জনগণনা অনুযায়ী পুরুলিয়ায় তফশিলি জাতি ১৮.২৯ শতাংশ, তফশিলি উপজাতি ১৮.২৭ শতাংশ, ৭.৭৬ শতাংশ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাস।
সেই পুরুলিয়ায় সিধো কানহো বিরসা বিশ্ববিদ্যালয় ২০২১ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি পিএইচডি করার জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি করে ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে দরখাস্ত আহ্বান করেছিল। সেই আবেদনের ভিত্তিতে গত ২৭ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন শাখা মিলিয়ে ৯৬ জনের তালিকা তৈরি করেছে। সেই সঙ্গে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে আগামী ১০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে অনলাইনে ফি জমা দিতে হবে ভর্তির জন্য। কিন্তু ওই বিজ্ঞপ্তিতে সংরক্ষণের কোনও তালিকা প্রকাশ না করায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে পড়ুয়াদের মধ্যে। যদিও সিধো কানহো বিরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি ভর্তির জন্য যে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছিল তাতে সংরক্ষণের কথা উল্লেখ করা হয়নি। তাই পড়ুয়াদের বোধগম্য হয়নি রাজ্য সরকারের সংরক্ষণ নীতি অনুযায়ী ভর্তির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়েছিল না। এবার পিএইচডিতে ভর্তির জন্য যোগ্য প্রার্থীদের যে তালিকা প্রকাশ করা হযেছে তাতেও সংরক্ষণের কোনও উল্লেখ নেই। ফলে, ছাত্রছাত্রীদের মনে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে, আদৌ সিধো কানহো বিরসা বিশ্ববিদ্যালয় সংরক্ষণ নীতি মেনে এই তালিকা প্রকাশ করেছে কিনা। আর যারা ভর্তির যোগ্য হয়েছেন তারা কোন ক্যাটাগরিতে সুযোগ পেয়েছেন তা নিয়ে তাই কোনও ধারণা করতে পারছেন না। তাই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, সিধো কানহো বিরসা বিশ্ববিদ্যালয় েকি তাহলে পিএইচডিতে বর্তির জন্য রাজ্য সরকারের সংরক্ষণ নীতি অনুসরণ করেনি? যদি সরকারি নিয়ম মেনে সংরক্ষণ নীতি মেনে ভর্তির জন্য তালিকা প্রকাশ করা হয়ে থাকলে সাধারণত ছাত্রদের নামের পাশে কে কোন শ্রেণিভুক্ত তা উল্লেখ করা হয়ে থাকে। কিন্তু এক্ষেত্রে তা উল্লেখ করা হয়নি। শুধুমাত্র কোন বিভাগে কারা কারা ভর্তির যোগ্য তা প্রকাশ করা হয়েছে। অথচ, রাজ্য সরকারের সংরক্ষণ নীতি অনুযায়ী তফশিলি জাতিদের জন্য ২২ শতাংশ, তফশিলি উপজাতিদের জন্য ৬ শতাংশ, ওবিসি-এ ১০ শতাংশ ও ওবসি-বি শ্রেণিভুক্তদের জন্য ৭ শতাংশ আসন সংরক্ষিত হওয়ার কথা। তাই এই সমস্ত শ্রেণির পড়ুয়ারা বুঝতে পারছেন না তাদেরকে সংরক্ষণ নীতি অনুযায়ী তালিকাভুক্ত করা হযেছে না সাধারণ শ্রেণি হিসেবে মনোনীত করা হয়েছে। এ বিষয় সিধো কানহো বিরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য দীপক কুমার করের যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তাই তার মত পাওয়া যায়নি। তবে, বহু ছাত্রছাত্রীর অভিযোগ তালিকায় সংরক্ষণ অনুয়ায়ী মনোনয়নের বিষয়টি না থাকায় তাদের সন্দেহ সংরক্ষণ নীতি মানা হয়নি।
তাদের বক্তব্য, সংরক্ষণ নীতির তোয়াক্কা না করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এমন তালিকা প্রকাশ করেছে যা দেখে বোঝার উপায় নেই তার মধ্যে কারা সংরক্ষণের সুবিধা পেয়েছেন।
এর আগে গৌড় বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, সেখানে পিএইডি করার জন্য যে তালিকা প্রথমে প্রকাশ করেছিল তাতে সংরক্ষণ নীতি না মেনে ওবিসিদের বাদ দেওয়া হয়েছিল। পরে বিষয়টি নিয়ে প্রতিবাদ ধ্বনিত হওয়া পরে সেই তালিকা সংশোধন করে সংরক্ষণ নীতি মেনে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হয়। কিন্তু সিধো কানহো বিরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে সেই ধরনের কোনও মনোভাব আপাতত দেখা যাচ্ছে না। তাহলে কি এসসি, এসটি, ওবিসিদের সংরক্ষণ বঞ্চিত করার জন্য সুকৌশলে সংরক্ষণভুক্ত কিনা তার উল্লেখ করা হয়নি, এই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেখানে বারে বারে রাজ্যের উন্নয়নে সবাইকে এগিয়ে নিয়ো যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে আসছেন, বিভিন্ন প্রকল্প ঘোষণা করছেন সেখানে পশ্চাদপদ শ্রেণির পড়ুয়াদের জন্য রাজ্য সরকার ঘোষিত সংরক্ষণের কথা কেন উল্লেখ নেই তা নিয়ে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct