মঞ্জুর মোল্লা, নদিয়া: রানাঘাটের নবদম্পতির স্কুটি চালিয়ে ঝালমুড়ি বিক্রির অভিনব প্রয়াসই দু’মুঠো ভাত যোগাচ্ছে তাদের অংকে বলে একের সাথে আর এক যোগ করলে দুই হয়! ভালোবাসা অবশ্য অন্য কথা বলে, স্বামী-স্ত্রী একসাথে একই পেশায় নিযুক্ত থাকলে দুই নয়! এগারো জনের সমতুল্য কাজ সম্ভব হয়! আর তাই সম্ভব করে দেখালেন, রানাঘাট আইশতলা গড়ের এলাকায় এ’দম্পতি নিহার রঞ্জন মজুমদার স্ত্রী রুপা মজুমদার
একে অপরকে দীর্ঘ সাত বছর ধরে ভালবেসেছেন একই স্কুলে পড়াশোনার সুবাদে। দীর্ঘ ৭ বছর অপেক্ষা করার পরেও, চাকরি জোটাতে না পেরে, প্রথমে মোবাইল সারানো,পরবর্তীতে স্কুটি মোটরসাইকেল সারানোর কাজ জুটিয়ে করোনা মহামারীতে রাজ্যজুড়ে হাজার হাজার মানুষ কর্মহীন স্ত্রী দুজন মিলে নতুন উপার্জনের রাস্তা বেছে নিল বৃদ্ধ বাবা-মাকে , এবং পড়াশোনা করা ভাইকে নিয়ে সংসার চলবে কিভাবে! করোনা পরিস্থিতিতে বন্ধ ছিলো সমস্ত দোকান ! সেই বেরোজগার পরিস্থিতি সামাল দিতে মোটর গ্যারেজে কাজ করার সময় ফাইন্যান্সে কেনা স্কুটি এবং রুপা দেবীর রান্নার প্রতি ঝোঁক কে কাজে লাগিয়ে নব উদ্যোগ গ্রহণ করে বাঁচার তাগিদে! দু একদিন বিকালে ওই দম্পতি ঘুরতে গিয়ে দেখে, পার্কে, খেলার মাঠে ,পাড়ার মোড়ে অনেকেই বিকেলে অবসর সময় কাটান গল্প করে! করোনা পরিস্থিতিতে দীর্ঘ লকডাউনের বিকাল বা সন্ধ্যা সময় খাবার দোকান গুলো বন্ধ ছিল বেশ কিছুদিন! আর সে সময় নিজেদের হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়াতে হতো , মুখের স্বাদ বদলের জন্য। ফুচকা,ঘুগনি, সিঙ্গারা, ঘটি গরম যাবতীয় কাউকে একজন পেলেই গোগ্রাসে সাবাড় করে দিত বিকালের পথচারীরা। আর তা থেকেই অনুপ্রাণিত হয়ে ব্যাবসায়িক সুবুদ্ধি জন্মায় ওই দম্পতির। মুখরোচক খাবার বেচেই দু মুঠো অন্ন যোগাবেন তারা। তবে রেসিপি হবে সম্পূর্ণ নিজস্ব! যা ইউটিউব বা বিভিন্ন খাদ্য খাবার এর ওয়েবসাইটে খুঁজে পাওয়া যাবে না। রুপা এবং তার শাশুড়ি অর্থাৎ নিহারবাবুর মা শাশুড়ি বউমা মিলে মুরগির মাংসের ছোট ছোট কিমা বানিয়ে কিছু অন্য ধরনের মসলা ব্যবহার করে সম্পূর্ণ ভিন্ন স্বাদের মাংস কষা তৈরি করলেন, যা মুড়ি মিশিয়ে বানালেন “মাংসের ঝাল মুড়ি” ! প্রথম প্রথম একটু ডাক -হাঁক করতে হয়েছিলো বটে! তবে এখন, মোবাইল ঝাল মুড়ির গাড়ি এসে পৌঁছালেই পিল পিল করে খরিদ্দার জমে যায় চারিপাশে।
ব্যাপ্তি ঘটেছে আশেপাশের বিভিন্ন গ্রাম শহর হবিবপুরের বিস্তীর্ণ এলাকা ! বেড়েছে বিক্রি! বিক্রি-বাট্টা সেরে বাড়িতে ঢোকার সময় সীমাও বেড়েছে সাথে সাথে! আবার বিক্রির উদ্দেশ্যে আগে বেরোতেন পাঁচটায় এখন খরিদ্দার এর চাপ এবং দূরের পথ সামাল দিতে বিকেল তিনটের মধ্যেই বেরিয়ে পড়তে হয়! ইদানীং অনেকে তো আবার, হোয়াটসঅ্যাপেই অর্ডার দিয়ে বসে থাকছেন প্রতীক্ষায়! নিহার রঞ্জন মজুমদার জানান
পেট্রোলের অত্যধিক মূল্যবৃদ্ধিতে ,তাদের নতুন ব্যবসায় বেশ খানিকটা ক্ষতি করলেও, হাল ছাড়তে রাজি নন তারা,লাভ কম হলেও,খরিদ্দার এর সংখ্যা দিয়ে তা পুষিয়ে নেবেন! মায়ের আশীর্বাদ গিন্নির ভালোবাসা থাকলে কোনো বাধাই, বাধা হয়ে দাঁড়াবে না। অন্যদিকে রুপা মজুমদার জানান,সারাদিন একসাথে কাটানো,বিকালে ঘুরতে যাওয়া কজনের কপালে জোটে! দুজনের হাতে হাত লাকি কাজ করলে অল্পদিনেই ব্যবসা বড় হয়ে যাবে,তখন বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে বিক্রির বদলে এক জায়গায় দাঁড়ালেই চলবে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct