আপনজন ডেস্ক: টোকিও অলিম্পিকের দ্বিতীয় দিনেই ইতিহাস সৃষ্টি করলেন ভারতীয় ভারোত্তোলক মীরাবাই চানু। মণিপুরের কন্যা মীরা বাই চানু এবারের অলিম্পিকে ৪৯ কেজি বিভাগে ভারতকে রুপো এনে দিলেন। ৪৯ কেজি ক্যাটাগরিতে ২৬ বছরের তারকা স্ন্যাচে ৮৭ কেজি এবং ক্লিন এন্ড জার্ক-এ ১১৫ কেজি মিলিয়ে মোট ২০২ কেজি উত্তোলন করেন। এটাই চলতি টোকিও অলিম্পিকে ভারতের প্রথম পদক প্রাপ্তি। অলিম্পিকের শুরুতে ভারতের এই পদক প্রাপ্তিতে চানুকে ধন্যবাদের ব্যনা বইয়ে দেওয়া হচ্ছে। রাষ্ট্রপতি থেকে প্রধানমন্ত্রী থেকে শচিন তেন্ডুলকর, উচ্ছ্বসিত হয়ে প্রত্যেকেই চানুকে অভিননন্দন জানান। ট্যুইট করে অভিনন্দন জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ট্যুইটে মমতা লেখেন, ‘টোকিও অলিম্পিকে মহিলাদের ভারোত্তোলনে মীরবাই চানু রুপো জিতেছে। তাকে আন্তরিক অভিননন্দন। তুমি আমাদের গর্বিত করেছো। তোমার সাফল্য অন্যদের কাছে অনুপ্রেরণা।’
এদিন ৪৯ কেজি ভারোত্তোলন বিভাগে সোনা জেতেন চিনের হউ ঝিহুই। ব্রোঞ্জ পদক জেতেন ইন্দোনেশিয়ান প্রতিদ্বন্দ্বী। অলিম্পিকে যাওয়াও আগেই চানু দুরন্ত ফর্মে ছিলেন। তাই তার কাছ থেকে প্রত্যাশা করা হয়েছিল পদকের। তা তিনি সম্পূর্ণ করলেন। অথচ, এই মীরাবাই চানু ২০১৬ অলিম্পিকে সফল হতে পারেননি।
অলিম্পিকে যাওয়ার আগে সংবাদমাধ্যমকে চানু বলেছিলেন, ‘আমি অবশ্যই টোকিও অলিম্পিকে একটি পদক জিতব। অলিম্পিকে খেলার অভিজ্ঞতা আমার আছে। আমার প্রথম অলিম্পিকে মেডেল জিততে ভুলে গেছি। তারপরে অভিজ্ঞতার অভাবে, আমি মেডেল জিতেছি। আমি সফল হতে পারিনি।’ কথা রাখলেন চানু।’
২০১৬ অলিম্পিকে ব্যর্থ হওয়ার পর মনোবল ভেঙে যায় চানুর। পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছায় যে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ায় তাকে মনোরগ বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিতে হয়। একসময় ভারোত্তোলনকে বিদায় জানাতে তৈরি থাকলেও পরে সেই মানসিকতার পরিবর্তন করেন। এরপর তার অদম্য আবেগ সাফল্যের মুখে দেখতে শুরু করেন। ২০১৭ সালে মীরা ওয়ার্ল্ড ভারোত্তোলন চ্যাম্পিয়নশিপে স্বর্ণ জেতেন ৪৯ কিলো বিভাগে। এরপর কমনওয়েলথ গেমসে স্বর্ণপদক জিতেছিলেন।
এদিন জয়ের পর মীরা বাই তার মায়ের কথা স্মরণ করেন। তিনি বলেন, আমার স্বপ্ন বাস্তবে রূপ পেল। পদকটি আমার দেশের এবং এখানে কোটি কোটি মানুষকে উৎসর্গ করলাম। তার পরিবারের সদস্যদের ধন্যবাদ জানান। বিশেষ করে তার মায়ের। তার মা তাকে সমর্থন করেছিলেন, বিশ্বাস রেখেছিলেন, ত্যাগ স্বীকার করেছিলেন। তার ফল মিলল। মীরা জানান, তাকে বিবাহের জন্য বলা হয়েছিল বাড়ি থেকে। কিন্তু তিনি বলেছিলেন অলিম্পিক থেকে পদক জিতে পিলে তারপর ভাবা যাবে।
মীরা বাইয়ের এই উত্থানের পিছনে রয়েছে এক ইতিহাস। জানা গিয়েছে, ইম্ফলের নংবক কাকচিং গ্রামে ১৯৯৪-এর ৮ অগস্ট জন্ম চানুর। জন্ম থেকেই তাঁর শক্তি আর পাঁচটা মেয়ের চেয়ে বেশি। সেটা অনেক আগেই আঁচ করেছিল তাঁর পরিবার। পেশায় কাঠ কুড়ুনি তাঁর বাবা-মা জ্বালানির জন্য বনে কাঠ কাটতে গেলেও, ভারী কাঠ তাঁর দাদা বইতে পারতেন না। কিন্তু চানু অনায়াসেই সেই ভার বহন করে বাড়ি নিয়ে আসতেন। এখন তিনি ভারোত্তোলন করে অলিম্পিকে পদক জিতে সেই পরম্পরা বজায় রাখলেন।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct