অমরজিৎ সিংহ রায়, বালুরঘাট: সারা বছরের নয় মাস তার নাগাল না পাওয়া গেলেও বৈশাখ মাসে জানান না দিয়েই বুনিয়াদপুরের পীরতলার এক নির্দিষ্ট দিনে হাজির। কারণ, তার ব্যবসার কাজই বর্যাকালে। তিনি আলতাফ আলি। ছাতার মিস্ত্রি হিসাবেই তিনি এলাকায় পরিচিত। আলতাফের বাড়ি বুনিয়াদপুর পুরসভার মিরজাদপুর এলাকায়। বৈশাখ মাস থেকে শ্রাবণ, এই চারমাস তিনি ফুটো ফাটা এবং ভাঙা ছাতা মেরামত করেই সংসার চালান।বাকি আটমাস নলকূপের মিস্ত্রির কাজ করেন। প্রত্যেকদিন সকাল আটটা থেকে বিকাল চারটা পর্যন্ত পীরতলার নির্দিষ্ট স্থানে বসে একমনে ছাতা মেরামতের কাজ করেন। আলতাফের দুই ছেলে এবং স্ত্রীকে নিয়ে সংসার। ছাতা মেরামতি এবং নলকূপের মিস্ত্রীর কাজ করেই তিনি ছেলেদের শিক্ষিত করছেন। তার বড়ছেলে আইন নিয়ে এবং ছোট ছেলে প্যাথোলজি নিয়ে পড়াশুনা করছে।
আলতাফ আলি বলেন, আমার পড়াশুনা না হলেও ছেলেদের শিক্ষিত করছি। আমার জমি জমা বলতে বাড়ির দুই শতক ভুমি ছাড়া কিছুই নাই। বছরের বৈশাখ থেকে শ্রাবণ, এই চারমাস ছাতা মেরামতির কাজ করি। বাকি আটমাস নলকূপ মেরামতি করে সংসার চালাই ছাতা মেরামতি করে প্রত্যেকদিন ৩০০- ৪০০ টাকা আয় করি। বছরের চারমাস ছাতা এবং বাকি আট মাস নলকূপ মেরামতি কাজ করে দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে সংসারের হাল টেনে চলেছি। ছোটবেলায় পেটের ভাত জোগাতে আব্বার সঙ্গে পরের জমিতে কাজ করেছি। সেজন্য লেখাপড়া শিখতে পারি নি। তবে, একজনের কাছ থেকে নলকুপ ঠিক করা এবং ছাতা মেরামত করার কাজ শিখেছিলাম, জন্য আজ খেয়ে পরে বেঁচে আছি। তবে, লকডাউনে কাজ করতে না পারায় খুবই সমস্যায় পরেছিলাম। বর্তমানে লকডাউন শিথিল হওয়ায় কাজ করতে পাড়ায় সমস্যা মিটেছে। ছেলেরা জীবনে প্রতিষ্ঠিত হলেও আমি এই পেশা ছাড়তে পারব না। ছাতার মিস্ত্রি হিসাবেই যেন আমার ইন্তেকাল হয়। আলতাফের শেষ ইচ্ছা এভাবেই ব্যক্ত করেন।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct