ৈফয়াজ আহমেদ: এই পৃথিবীর রহস্যের শেষ নেই। প্রতিনিয়ত সেই রহস্য উম্মোচিত হয়ে চলেছে পৃথিবীর আদিকাল থেকে। এই রকমই এক রহস্যময় স্থান ‘বাল্ট্রা’। এটি একটি দ্বীপাঞ্চল।
বাল্ট্রা দ্বীপ এর অবস্থান দক্ষিণ আমেরিকার ইকুয়েডরে। এটি মূলত একটি মানববসতিশূন্য একটি দ্বীপ। ইকুয়েডর এর নিকটবর্তী ১৩ টি দ্বীপ নিয়ে গঠিত গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জ। আর এই ১৩টি দ্বীপের একটিই হচ্ছে বাল্ট্রা। কিন্তু এই অঞ্চলের অন্য ১২টি দ্বীপ থেকে বাল্ট্রা দ্বীপ একেবারেই আলাদা, অদ্ভুত এবং রহস্যময়। মানব বসতি নেই বলে মানুষ এই দ্বীপকে “মৃত দ্বীপ” বলেও ডাকে। কিন্তু কেন? আজ আমরা সেই প্রশ্নের উত্তর জানার চেষ্টা করবো। বাল্ট্রা দ্বীপকে কেন অভিশপ্ত বলা হয়? জানা যায় যে, বাল্ট্রা দ্বীপে এক সময় মানববসতি ছিলো। কিন্তু কয়েকশো বছর আগে এই দ্বীপে কি এক অদ্ভুত রোগ ছড়িয়ে পড়ে। ফলে মানুষ মরতে শুরু করে। এবং ভয় পেয়ে দ্বীপবাসীরা সবাই এই দ্বীপ ছেড়ে পালায়। তারা ফিরে গিয়ে সবাইকে জানায় এই দ্বীপটি অভিশপ্ত, কেউ যেন দ্বীপের আশে পাশে না যায়, একবার গেলে আর প্রান নিয়ে ফেরা যাবে না। তারপর থেকে দ্বীপটি অভিশপ্ত দ্বীপ নামে পরিচিতি পেয়েছে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় কৌশলগত কারণে এই দ্বীপপুঞ্জের কয়েকটি দ্বীপে এয়ারবেস স্থাপন করে যুক্তরাষ্ট্র সরকার। তখনকার এয়ারবেসের একজন অফিসার ফ্রান্সিস ওয়াগনার এর মাধ্যমেই বিশ্ববাসী প্রথম জানতে পারে বাল্ট্রা দ্বীপের অদ্ভুত চরিত্রের কথা। এরপর অনেকেই এই দ্বীপের রহস্যময় আচরণের কথা স্বীকার করেন।
এটি গ্রীষ্মমন্ডলীয় দ্বীপপুঞ্জ হওয়ায় এখানে প্রচুর বৃষ্টি হয়। কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার হলো বৃষ্টির এক ফোঁটাও পড়ে না বাল্ট্রাতে। কী এক রহস্যজনক কারণে বাল্ট্রার অনেক উপর দিয়ে উড়ে গিয়ে অন্য পাশে পড়ে বৃষ্টি। বাল্ট্রা অর্ধেক পার হওয়ার পর অদ্ভুতভাবে আর এক ইঞ্চিও এগোয় না বৃষ্টির ফোঁটা। বৃষ্টি যত প্রবলই হোক এ যেন সেখানকার এক অমোঘ নিয়ম। বাল্ট্রাতে এলেই অস্বাভাবিক আচরণ করে নাবিক বা অভিযাত্রীর কম্পাস। সব সময় উত্তর দিক নির্দেশকারী কম্পাস এখানে কোনো সময় স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে, আবার দিক-নির্দেশক কাঁটা ইচ্ছামতো ঘুরতে থাকে অথবা উল্টাপাল্টা দিক নির্দেশ করে।
সবচেয়ে রহস্যজনক ব্যাপার হলো বাল্ট্রা দ্বীপের উপর প্লেনে থাকাকালীন সময়েও এমন অদ্ভুত আচরণ করে কম্পাস। আবার দ্বীপ পার হলেই সব ঠিক। বাল্ট্রার আরেকটি অদ্ভুত দিক হলো- এর “মানসিক” দিক। অন্য বারোটি দ্বীপের তুলনায় “মৃত দ্বীপ” বাল্ট্রায় পা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই যে কারো মাথা অনেক হালকা হয়ে যায়। অজানা অচেনা কোনো এক জায়গায় হারিয়ে যাওয়ার আশ্চর্যরকম ভালো একটা অনুভূতি আচ্ছন্ন করে ফেলে মনকে। বেশিক্ষণ এ দ্বীপে থাকলে দ্বীপ থেকে চলে আসার পর কিছুদিন সেই আশ্চর্য অনুভূতি থেকে যায়। পরে অবশ্য আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যায়।
অদ্ভুত দ্বীপ বাল্ট্রায় কোনো বৃক্ষ নেই। নেই কোনো পশুপাখি। কোনো পশুপাখি এ দ্বীপে আসতে চায় না। দ্বীপের রহস্যময়তার আবিষ্কর্তা ওয়েগনার জোর করে কিছু প্রাণীকে বাল্ট্রা এবং এর পাশের দ্বীপ সান্তাক্রুজের মধ্যবর্তী খালে ছেড়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু দেখা গেল বাল্ট্রাকে এড়িয়ে সান্তাক্রুজের ধার ঘেঁষে চলছে প্রাণীগুলো। শুধু তাই নয়, উড়ন্ত পাখিগুলোও উড়তে উড়তে বাল্ট্রার কাছে এসেই ফিরে যাচ্ছে। দেখে মনে হয়, যেন অদৃশ্য কোনো দেয়ালে ধাক্কা খাচ্ছে ওরা। বাল্ট্রা দ্বীপের এরকম অদ্ভুত আচরণের কোনো গ্রহণযোগ্য কারণ এখনো কেউ খুঁজে পায়নি। তবে বিজ্ঞানীরা আজও এ রহস্যের কোন কুলকিনারা করতে পারেনি।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct