কুতুবউদ্দিন মোল্লা ,ক্যানিং: আবারও বাঘের আক্রমণে নিখোঁজ হলেন এক মৎস্যজীবী। নিখোঁজ মৎস্যজীবীর নাম দীনবন্ধু মন্ডল(৫১)। ঘটনাটি ঘটেছে বৃহস্পতিবার সুন্দরবনের ঝিলা ৫ নম্বর জঙ্গলে। উল্লেখ্য, মাত্র ছয় দিনের ব্যবধানে তিন তিন বার বাঘের আক্রমণের ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। গত ১০ জুলাই সুন্দরবনের পঞ্চমুখানি জঙ্গল লাগোয়া কাপূরা নদীখাড়িতে কাঁকড়া ধরতে গিয়ে বাঘের আক্রমণে নিখোঁজ হন সবিতা সরদার(৪৫) নামেরএক মহিলা মৎস্যজীবী। ১৩ জুলাই সুন্দরবনের ঝিলা জঙ্গল সংলগ্ন কাঁকসা খালে কাঁকড়া ধরতে গিয়ে বাঘের আক্রমণে প্রাণ হারান ধরণী মণ্ডল(৫৮) নামে এক মৎস্যজীবী।দুটি ক্ষেত্রে বনদফতরের অনুমতি ছাড়াই জঙ্গলে প্রবেশ করেছিলেন মৎস্যজীবীরা। তবে দীনবন্ধু মন্ডল বনদফতরের কাছ থেকে অনুমতি নিয়েই কাঁকড়া ধরতে গিয়েছিলেন।স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে বিগত চারদিন আগে দরিদ্র ওই মৎস্যজীবীর বড় দাদা পঞ্চানন মন্ডল মারা গিয়েছিলেন। পরিবারে অর্থনৈতিক অবস্থা খুবই করুণ। যার ফলে পারলৌকিক ক্রিয়াকর্মের জন্য টাকার প্রয়োজন হয়ে পড়ে। দাদার পারলৌকিক ক্রিয়া করার জন্য বনদফতর থেকে বৈধ অনুমতি নিয়ে সুন্দরবনের জঙ্গলে তিনজন সঙ্গী বিপিন,সাধন ও ভোজন মন্ডল কে নিয়ে কাঁকড়া ধরার জন্য রওনা দিয়েছিলেন গোসাবার সাতজেলিয়ার ২নম্বর এমলিবাড়ি গ্রাম থেকে। বৃহষ্পতিবার দুপূর নাগাদ সুন্দরবনের ৫ নম্বর ঝিলা জঙ্গল এলাকায় নদীখাড়িতে কাঁকড়া ধরার জন্য তাদের ডিঙি নৌকা নোঙর করেছিলেন জঙ্গল ঘেঁষা নদীর তীর। কোনও কিছু বোঝার আগেই নৌকার উপর দীনবন্ধুকে টার্গেট করে ঝাঁপিয়ে পড়ে সুন্দরবনের এক বিশাল আকৃতির রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার। ওই মৎস্যজীরী ঘাড়ে থাবা বসিয়ে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। সঙ্গীসাথীরা বাঘের মুখ থেকে দীনবন্ধুকে উদ্ধার করার জন্য নৌকার বৈঠা আর কাঁকড়া ধরার শিক নিয়ে বাঘের সাথে লড়াই করে।
দীর্ঘ প্রায় মিনিট চল্লিশ রুদ্ধঃশ্বাস লড়াই চলে। অবশেষে রয়্যাল বেঙ্গলের ভয়ঙ্কর মূর্ত্তির সামনে নিরুপায় হয়ে রণে ভঙ্গ দেয় তিন মৎস্যজীবী। বাঘ তার শিকারকে ঘাড় মটকে সুন্দরবনের গভীর জঙ্গলে নিয়ে গা ঢাকা দেয়। তিন সঙ্গী নৌকা নিয়ে ফিরে আসেন ২ নম্বর এমলিবাড়ি গ্রামের ঘাটে। দুঃসংবাদের খবর পৌঁছায় গ্রামে এবং ওই পরিবারের সদস্যদের কাছে। শোকে মূহ্যমান হয়ে পড়ে সমস্ত গ্রামের মানুষজন সহ দীনবন্ধু’র স্ত্রী অরুণা মন্ডল।
অন্যদিকে এমন দুঃসংবাদ শোনামাত্র হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় ওই মৎস্যজীবীর শ্যালক। একই পরিবার চারদিনে তিনজনের মৃত্যুতে এলাকায় নেমে আসে চরম বিপর্যয়ের শোকের ছায়া। স্থানীয় বিশিষ্ট সমাজসেবী তথা শিক্ষক স্বপন মন্ডল বলেন, “দরিদ্র মৎস্যজীবীরা রুটিরুজীর টানে সুন্দরবনের গভীর জঙ্গলের নদীখাড়িতে গিয়ে বাঘের আক্রমণের সম্মূখীন হয়ে প্রতিনিয়ত প্রাণ হারাচ্ছেন। মন্ডল পরিবারের উপর যে এমন ভাবে ভয়ংঙ্করতম বিপর্যয় নেমে আসবে তা কল্পনাতেও কেউ ধারণা করতে পারেননি। খুব মর্মান্তিক ঘটনা’।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct