শংকর সাহা: ধূমপান বিরোধী দিবস’ প্রতি বছরই একটি নির্দিষ্ট তারিখে পালিত হয়। ধূমপান বা তামাকজাত সেবন যে স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকারক সে বিষয়ে সতর্ক করা হয়। সর্বত্রই পাবলিক প্লেসে অনেক সময় নজরে আসে বড়ো বড়ো করে লেখা “নো স্মোকিং” সেটি দেখার পড়ে স্বভাবতই মনে প্রশ্নচিহ্ন এঁকেছে? মনে হয়েছে এটি কি শুধুই জনসমক্ষে তুলে ধরার জন্য? কারণ এতো কিছুর পড়েও মানুষ আজও যেন অসচেতনই রয়ে গেছে। ৩১শে মে পালিত হয় বিশ্ব তামাক বর্জন দিবস। এই দিনে সরকারি হোক কিংবা বেসরকারি সব পক্ষ থেকেই জনসাধারণের উদ্দেশ্যে প্রচারাভিযান করা হয়েছে কিন্তু মানুষ আজও অসচেতনই রয়ে গেছে। তামাকজাত দ্রব্য সেবনে জীবনঘাতী রোগ যে অবধারিত তা তামাকদ্রব্য সেবনকারী অনেকেরই জানেন। প্যাকেটের গায়েও বিধিবদ্ধ সর্তকীকরণ দেওয়া থাকে। কিন্তু এরপরেও তামাক দ্রব্য বর্জনের মাত্রা তেমন কমেনি বরং ব্যবহার আরও বেড়েছে। অনেক সময় বিভিন্ন জনবহুল এলাকায় বিশেষত: চলন্ত গাড়িতে অনেকেই অসতর্কভাবে ধূমপান করেন। এতে করে ব্যবহারকারীর যেমন ক্ষতি হয় সমপরিমান ক্ষতি হয় যারা পাশে থাকেন।
আজ বিভিন্ন তামাকজাত দ্রব্য কিশোর বয়স থেকেই অতি পরিচিত নাম। রাস্তার মোড়ে অলিগলিতে বিভিন্ন মুদিখানা দোকান থেকে শুরু করে পানের দোকানে সর্বত্র মেলে এই পানমশলা থেকে শুরু করে নানান গুটখাজাত দ্রব্য। তবে শুধু এগুলোই না সাথে ধূমপানও প্রকাশ্যে নিষিদ্ধ হোক এবং তা হোক সবার আগে কারণ নেশামুক্ত সমাজ গঠনই আমাদের সকলের যেন স্বপ্ন ও লক্ষ্য।
বর্তমান প্রজন্মের ছাত্র তথা যুবসমাজের মধ্যে আজ অপসংস্কৃতির ছায়া ক্রমশ গ্রাস করছে। বর্তমান প্রজন্ম বুঁদ হয়ে আছে বিভিন্ন নেশায়। বিভিন্ন তামাক ও তামাকজাত দ্রব্যের নেশায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ছেন এ প্রজন্মের যুবসমাজ তথা ছাত্রসমাজ। যৌবনের প্রাক মুহূর্ত থেকেই নেশায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ছে তারা। পানের দোকান থেকে শুরু করে ফোন মারফত নেশাজাত বিভিন্ন জিনিস পৌঁছে যাচ্ছে এ প্রজন্মের হাতে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তাতে স্কুল কলেজের ছাত্রছাত্রীদের সামিল হতে দেখা যাচ্ছে। নেশাগ্রস্ত হবার ফলে একদিকে তারা যেমন বিভিন্ন অসুখে আক্রান্ত হচ্ছে অন্যদিকে ব্যক্তিজীবন ও পারিবারিক জীবন থেকে তারা ক্রমশ পিছিয়ে পড়ছে। এক নিশ্চিত ভবিষ্যতের হাতছানি দিচ্ছে তাদের। নেশায় পড়ে অসময়েই কত নিষ্পাপ প্রাণ ঝরে পড়ে। পারিবারিক ক্ষেত্রে তৈরি হয় এক জটিলতা।
সম্প্রতি করোনা আবহে দিনে দিনে সংক্রমণের মাত্রা বাড়ছে। এই মুহূর্তে যেমন গৃহবন্দী থাকতে হবে অন্যদিকে বাইরে বের হলে মুখে মাস্ক বাধ্যতামূলক হোক। কারণ স্বাস্থ্যই সম্পদ। সকলকেই নিজ স্বাস্থ্যের কথা ভাবতে হবে, ভাবতে হবে পারিপার্শ্বিক পরিবেশের কথাও। এই সংক্রমণকে থামাতে শুধুমাত্র প্রশাসন না আমাদেরও কিছু দায়িত্ব থেকে যায়? বাইরে বেরোলে হয়তো নজরে আসে অনেকেই মুখেপান বা পানজাত মশলা হোক বা তামাকজাত কোনো মশলাই হোক চিবোতে চিবোতে রাস্তায় বা পথে ঘাটে যত্রতত্র থুতু ফেলেন। কিন্তু এই সংকটময় মুহুর্তে এটি খুবই নিন্দনীয় ও অবিবেচক কাজ। কারন নভেল করোনা ভাইরাস একটি ভাইরাসজনিত অসুখ। আর এই থুতু কোভিড -১৯ সংক্রমণের মাধ্যম হতে পারে। তাই এখনই কঠোরভাবে আইনকে প্রয়োগ করতে হবে যেমন তেমনই আমজনতাকেও আরও বেশি সচেতন হতে হবে। সরকারি দিকথেকে বিভিন্ন সময়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর জন্যে তামাক বা তামাকজাত দ্রব্য বর্জনের প্রচার চালানো হয়। কারণ, এতো কিছুর পরেও মানুষ আজও যেন অসচেতনই রয়ে গেছে।তামাকজাত দ্রব্য সেবনে জীবনঘাতী রোগ যে অবধারিত তা তামাকদ্রব্যসেবনকারী অনেকেরই জানা। প্যাকেটের গায়েও বিধিবদ্ধ সর্তকীকরণ দেওয়া থাকে। কিন্তু এরপরেও তামাক দ্রব্য বর্জনের মাত্রা তেমন কমেনি বরং ব্যবহার আরও বেড়েছে। কিন্তু আজ যখন করোনা ভাইরাসের ভয়াবহতায় আমরা সচেতন সকল নাগরিকই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার চেষ্টা করছি সেখানে অবিবেচক কিছু মানুষের তামাক সেবনে প্রকাশ্যে থুথু ফেলা চরম অসাবধানতার বহিঃপ্রকাশ।
সেক্ষেত্রে প্রশাসনকে আরও শক্ত হতে হবে। সরকারী আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে অনেকে আড়ালে আবডালে বিভিন্ন নেশাজাত জিনিস বিক্রি করে থাকেন। এগুলো একদিকে যেমন যুবসমাজকে ধ্বংস করে তেমনই সমাজ ও পারিবারিক জীবনে ধ্বংস নিয়ে আসে।আবার শুধুমাত্র আইন প্রনয়ণ করেই নয় জনসাধারণের সচেতনতাই পারে তামাকমুক্ত পরিবেশ গঠন করতে। শুধুমাত্র প্রশাসনের উপরে দায়িত্ব চাপিয়ে দলেই হবে না কিছু দায় ও দায়িত্ব আমাদেরও থেকে যায়। যারা বিভিন্ন তামাক জাতীয় বস্তু সেবন করেন তারা নিজেরাও হয়তো জানেন এতে যেমনকঠিন ব্যাধির সম্মুখীন হচ্ছেন অন্যদিকে কুঅভ্যাসের দিকে দিনে দিনে এগিয়ে চলেছেন। তাদেরও আত্মবিশ্লেষনের প্রয়োজন রয়েছে। তাই মানুষ যেদিন সচেতন হবে সেইদিনই তামাক বিরোধী দিবস পালন তাৎপর্যবাহী হয়ে উঠবে।
লেখক প্রাবন্ধিক ও নাট্যকর্মী
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct