আপনজন ডেস্ক: করোনার জন্য যখন দেশ তথা রাজ্যের পরিস্থিতি উত্তাল, মানুষ হাসপাতালে বেড, অক্সিজেন, অ্যাম্বুলেন্স, ডাক্তারের পরামর্শ পাওয়ার জন্য হাহাকার চলছে সেই সময় অসহায় মানুষকে সাহায্যর হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন তরুণ ডাক্তারি পড়ুয়া সামিনুর, শাহাবাজরা। এই দুই ডাক্তারি পড়ুয়া এমবিবিএস পড়া শেষ করার আগেই তাদের হাত পেকে উঠছে সমাজসেবায়।
সামিনুর আলম বর্তমানে এসএসকেএম হাসপাতালের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। তার বাড়ি বীরভূমের মুরারইয়ের প্রত্রন্ত গ্রাম মুখলিশপুরের। আর শাহাবাজ সেখ রামপুরহাট মেডিকেল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। বাড়ি নদীয়ায়।
করোনা সংক্রমণ এবং তার রাজ্যে মানুষের মৃত্যু লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। পরিবারে কেউ করোনায় আক্রান্ত হলে দিশেহারা হয়ে পড়ছেন। তাই করোনা উপসর্গযুক্ত,আক্রান্ত মানুষ যারা হোম আইসোলেশনে আছেন তাদের জন্য টেলিমেডিসিনে ডাক্তারের বিনামূল্যে পরামর্শ দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন ওই ডাক্তারি পড়ুয়ারা। মাত্র ৬ জন চিকিৎসক নিয়ে এই পরিষেবা শুরু হলেও বর্তমানে ২০ জন চিকিৎসক প্রতিনিয়ত করোনা উপসর্গযুক্ত, আক্রান্ত মানুষকে পরামর্শ দিচ্ছেন। তাদের মধ্যে কেউ মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক, কেউ পিজিটি, আবার কেউ মেডিকেল অফিসার। তারা হাসপাতালে অক্লান্ত পরিশ্রম করে ডিউটি দেওয়ার পরেও অসহায় মানুষের সাহায্যার্থে বিনামূল্যে পরামর্শ দিচ্ছেন দিন রাত। তাদের প্রচেষ্টা সত্যিই প্রশংসার যোগ্য।
এই সমাজসেবায় নিযুক্ত চিকিৎসকরা জানান করোনা উপসর্গযুক্ত, আক্রান্ত মানুষকে বিনামূল্যে পরামর্শ দিতে পেরে তারা খুবই আনন্দিত। করোনা পরিস্তিতিতে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো প্রতিটি মানুষের কর্তব্য। আর আমরা সেই কর্তব্য পালন করারর জন্যই টেলিমেডিসিনে যুক্ত আছেন এই সব চিকিৎসকরা। গ্রাম থেকে শহর প্রতিদিন ৫০০ জনের কাছাকাছি মানুষ তাদের এই পরিষেবা পাচ্ছেন বলে তাার জানান। তারা এর পাশাপাশি কারও করোনার উপসর্গ দেখা দিলে কোথায় টেস্ট করাবেন, রিপোর্ট পজেটিভ এলে কোন হাসপাতালের যাবেন, কীভাবে যাবেন, অক্সিজেনের প্রয়োজন হলে তারও ঠিকানা দিয়ে দিচ্ছেন। জরুরি রোগীর জন্য তারা রক্তেরও ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন। এই সংকট পরিস্থিতিতে যখন অনেক মানুষ করোনা রোগীর জন্য জীবনদায়ী ওষুধ, অক্সিজেন সিলিন্ডার, অ্যাম্বুলেন্সের ভাড়া দ্বিগুণ, তিনগুণ চাইছেন, তখন নিঃস্বার্থভাবে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন সামিনুর, শাহাবাজরা। অসহায় মানুষের বাঁচার রসদ হয়ে উঠছেন তারা। আর এইরকমই দিন রাত পরিশ্রম করছে ‘প্রয়াস’ নামে একটি সংস্থা। ‘প্রয়াস’ এর উদ্যোগে গড়ে উঠেছে টেলিমেডিসিন ব্যবস্থাপনা। করোনা উপসর্গযুক্ত, আক্রান্ত রোগীদের বিনামূল্যে ডাক্তারের পরামর্শ দেওয়া কাজ করছেন। রক্ত সঙ্কটের কথা মাথায় স্বেচ্ছায় রক্তদান শিবির করছেন। করোনা আক্রান্ত রোগীর বাড়িতে গিয়ে তারা খাবার পৌঁছানোর জন্য ব্রত করেছেন। প্রয়াসের সদস্যরা হলেন গোলাম কিবরিয়া, কাওসার সেখ, আসিক মন্ডল, শাহাবাজ শেখ। গোলাম কিবরিয়া, কাওসার সেখ দুজনই বর্ধমান মেডিকেল কলেজের ছাত্র। আসিক মণ্ডল রামকৃষ্ণ মিশন থেকে কেমিস্ট্রিতে এমএসসি করছেন। প্রয়াসের অন্যতম সদস্য গোলাম কিবরিয়া জানান যে শুধু তারা নন, পুরো গ্রুপের সদস্যের মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পেরেছি। প্রয়াসের সকল সদস্য দিনরাত অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে মানবিক নিদর্শন তৈরি করছে। তারা সব সময় যেকোনো পরিস্থিতি মানুষের পাশে থাকার অঙ্গীকার করেছেন।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct