ফারুক আহমেদ: ৫ মে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৃতীয়বারের জন্য শপথ নিলেন। রাজ্য সরকারের নিকট আন্তরিক অনুরোধ করছি, সংখ্যালঘুরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তৃতীয় পর্বেও পশ্চিমবঙ্গে স্বাগত জানিয়েছেন এবং দু’হাতে আর্শীবাদ করে ভোট দিয়েছেন। এবার নব-নির্বাচিত বিধায়কদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে সাহায্য করতে এগিয়ে আসুক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-এর সরকার। এবার সংখ্যালঘুদের মধ্যে থেকে বিধায়ক হয়েছেন ৪৪ জন। ২০১৬ বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস, সিপিএম এবং কংগ্রেসের প্রার্থীদের মধ্যে মুসলমান বিধায়ক জিতেছিলেন ৫৭ জন। ২০২১ সালে সংখ্যাটা ১৩ টা কমে গেল। বাংলায় তিরিশ শতাংশ মুসলিম জনসংখ্যার অনুপাতে বিধায়ক পদে প্রার্থী করলে সংখ্যাটা আরও বাড়তো। ৪৫ জন মুসলমানকে এবছর বিধানসভায় প্রতিদ্বন্দ্বী করতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রার্থী করেছিলেন। প্রাপ্য ছিল ৮৫টার বেশি আসন। আশা রাখি এবারের মন্ত্রীসভায় সংখ্যালঘুদের মধ্যে থেকে ১২ জনকে গুরুত্বপূর্ণ পদে মন্ত্রী হওয়ার সুযোগ করে দেবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। পাশাপাশি তপশিলি জাতি, উপজাতি এবং ওবিসিদেরকেও দায়িত্বশীল ভূমিকা নিতে গুরুত্বপূর্ণ দফতর দিয়ে নয়া নজির সৃষ্টি করতে হবে।
বিগত দশ বছর দিদির শাসন পর্বে আমারা দেখেছি গুরুত্বপূর্ণ দফতর বেশিরভাগ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর নিজের হাতে রেখেছিলেন এবং অধিকারী, চট্টোপাধ্যায়, মুখোপাধ্যায় ও বন্দ্যোপাধ্যায়দের হাতে তুলে দিয়েছিলেন। তুলনায় কম গুরুত্বপূর্ণ দফতর দিয়েছিলেন কয়েকজন মুসলমান বিধায়ককে। বাংলায় মুসলমান প্রায় ৩০ শতাংশ। তার গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রিত্ব পাওয়ার ক্ষেত্রে খামতি ছিল। এবছর দিদিকে বিষয়টা এই পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে।
খুব প্রাসঙ্গিক প্রসঙ্গ তুলছি বিভাগ পরবর্তী পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক ও সামাজিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে একমাত্র সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায় বাংলার মুসলমানদের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রক দিয়েছিলেন। পরবর্তী শাসনকালে সমস্ত রাজনৈতিক দলের কর্মকর্তারা বাংলার মুসলমানকে উপেক্ষা এবং বঞ্চিত করেছেন।
বিজেপিকে আটকাতে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়ে বাংলার মুসলমানরা তৃণমূল কংগ্রেসকে ভোট দিয়েছে দুহাত ভরে। তাই তৃতীয়বার সরকার গঠিত হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের।
এবারের নির্বাচনে প্রমাণ করেছেন সমাজের মূল স্রোতেই থাকতে চেয়েছেন সংখ্যালঘু মুসলিম, আদিবাসী ও দলিতরা। জোটকে সমর্থন না দিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের জয়জয়কার সুনিশ্চিত করেছেন। মহিলারাও দু’হাতে ভরে দিদির প্রতি আস্থা রেখেছেন। অবশ্য ওপার বাংলা থেকে আশা মতুয়া সম্প্রদায় এবং বাঙালি হিন্দুদের একটা বড়ো অংশই বিজেপিকে ভোট দিয়েছেন। পশ্চিমবাংলাতে মেরুকরণের ভোট হয়েছে সর্বত্র। মুর্শিদাবাদ জেলায় বিজেপি বেশিরভাগ আসনে দ্বিতীয় হয়েছে। বিগত ১০০ বছর ধরে সাম্প্রদায়িকতাবাদীরা অখণ্ড বাংলার রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় আসতে পারেনি, কিন্তু এবার ৭৭ টি বিধায়ক নিয়ে শক্তিশালী বিরোধী আসনে বিজেপি। ৭২ টা আসনে খুব অল্প মার্জিনে বিজেপি হেরেছে। আগামীতে বিভেদকামী শক্তির পতন সুনিশ্চিত করতে হিন্দু ও মুসলমানদের সম্মিলিত উদ্যোগ নিতে হবে।
রাজনৈতিক হিংসা থেকে বাংলার মানুষকে রক্ষা করতে হবে তৃণমূল কংগ্রেসের সরকারকে। বিভেদকামী শক্তির উত্থান ঘটেছে দ্রুত গতিতে। চারিদিকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অটুট বন্ধন দৃঢ় করতেই হবে। বাংলার মিশ্র সংস্কৃতি ধ্বংস কারিদের অশুভ উদ্দেশ্য বানচাল করতে বাঙালিকে আরও সচেতন হতেই হবে।
করোনা চারিদিকে খুব বাড়বাড়ন্ত। আমাদেরকে আরও বেশি করে সচেতন হয়ে মানুষকে বোঝাতে হবে, মহামারী পরিস্থিতি সামাল দিতে হবে। তাই করোনা থেকে বাঁচতে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্ত বিধিনিষেধই মানতে হবে।
এবারের নির্বাচন ছিল বাঙালির অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রাম। সমস্ত বাংলার মানুষের সঙ্গে দেশের মধ্যে একমাত্র মহিলা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কুর্নিশ জানাই। বাংলা জুড়ে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে এগিয়ে আসুন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-এর সরকার। তাঁর তৃতীয় পর্ব পশ্চিমবঙ্গের মানুষের মনে দাগ কেটে যাক।
মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী তৃতীয়বার আপনি শপথ নেওয়ার জন্য আমরা গর্বিত। সংখ্যালঘুরা (মুসলিম, খ্রিস্টান, শিখ, জৈন এবং ভাষাগত সংখ্যালঘুরা) আপনাকেই চেয়েছেন। দীর্ঘ দিন তাদেরকে ধর্মের পরিচয়ে দেখা হয়েছে। আপনি তাদের ভারতের নাগরিক হিসেবে বিবেচনা করে তাদের উন্নয়নের দিকে এবং যোগ্য ব্যক্তির যোগ্য স্বীকৃতি দিতে নজর দিন।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বলছি মাননীয় দিদি আপনি নিজের স্বাস্থ্যের প্রতি নজর দিন। বাঙালির কল্যাণে আপনাকে আরও বড়ো ভূমিকা নিতে হবে। ভোট পরর্বতী রাজনৈতিক হিংসা বন্ধে প্রতিটি রাজনৈতিক দল ও সম্প্রদায়ের মানুষজন এগিয়ে আসুক রাজ্যে শান্তি বজায় রাখতে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct