আপনজন ডেস্ক: করোনা সংক্রমণ দিনে দিনে বাড়ছে রাজ্যে। তাই করোনা মোকাবিলায় মুখ্যমন্ত্রিত্বের শপথ নেওয়ার পরই বিশেষ পদক্ষেপ নিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার পরই রাজ্যের করোনা পরিস্থিতি নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই বৈঠকেই তিনি জানান, লোকাল ট্রেল চলাচল আপাতত বন্ধ রাখা হবে। মমতার ওই সাংবাদিক বৈঠকের পর এ নিয়ে নবান্নের তরফে এক নির্দেশিকা জারি করা হয়। সেই নির্দেশিকার ১০ নম্বরে উল্লেখ, আপাতত ১৪ দিন বন্ধ থাকবে পূর্ব ও দক্ষিণ পূর্ব শাখায় লোকাল ট্রেন পরিষেবা। তবে মেট্রো পরিষেবা ও বাস চলাচল বহাল তাকবে। কিন্তু তা সংখ্যায় অর্ধেক হয়ে যাবে। এরপর রেলের তরফ থেকেও মমতা এই পদক্ষেপকে মেনে নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
জেলাগুলিতে যেভাবে করোনা সংক্রমণের হার বাড়ছে মুখ্যমন্ত্রী উদ্বেগ প্রকাশ করেন বৈঠকে। এর কারণ হল হর, ট্রেনে বা বাসে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা মুশকিল হয়। তাই আরও বেশি ঝুঁকির দিকে না গিয়ে লোকাল ট্রেন বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। নবান্ন থেকে এই মর্মে নির্দেশিকা প্রকাশ করা হয়।
নবান্নের নির্দেশিকা প্রকাশ হওয়ার পর এক বিবৃতিতে রেল জানায়, আপাতত লোকাল ট্রেন পরিষেবা বন্ধ থাকবে। এমনকি করোনা পরিস্থিতিতে রাজ্য সরকারের পরামর্শ মেনেই এই সিদ্ধান্ত রেলের। পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত লোকাল ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকবে বলা হলেও কতদিন বন্ধ থাকবে তা নিয়ে অবশ্য কিছু বলা হয়নি। যদিও দূরপাল্লা ও অন্যান্য বিশেষ ট্রেন এবং পণ্যপরিবাহী পরিষেবা চালু থাকবে বলে জানিয়েছিল রেল।
এদিন নবান্ন থেকে যে নির্দেশিকা প্রকাশ করা হয়, তাতে বলা হয়েছে, সরকারি অফিসে কর্মীদের ৫০ শতাংশ উপস্থিতি করা হচ্ছে। বেসরকারি অফিসের ক্ষেত্রে বাড়ি থেকে কাজের ক্ষেত্রে উৎসাহ দেওয়া হবে। অফিস চালু থাকলেও সামাজিক দূরত্বের বিধি মানতে হবে। কোনওভাবেই কোনও শিফটে উপস্থিতি ৫০ শতাংশের বেশি হবে না। ব্যাঙ্ক পুরো খোলা থাকবে না। গ্রাহকদের সকাল ১০ টা থেকে দুপুর ২ টো পর্যন্ত ব্যাঙ্ক চলবে। প্রতি শনিবার ব্যাঙ্ক বন্ধ থাকবে।যাবতীয় শপিং কমপ্লেক্স, মল, বিউটি পার্লার, সিনেমা হল, স্পা, রেস্তোরাঁ, সুইমিং পুল, জিম, স্পোর্টস কমপ্লেক্স বন্ধ থাকবে। কলকারখানা, মিল এবং চা বাগানে সর্বাধিক ৫০ শতাংশ কর্মী উপস্থিত থাকতে পারবেন।যাবতীয় বিনোদন, রাজনৈতিক সংক্রান্ত জমায়েত নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। বিয়ে বা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সর্বাধিক ৫০ জন থাকতে পারবেন। সেজন্য আগে থেকে স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতি নিতে হবে। শেষকৃত্যে ২০ জনের বেশি থাকার অনুমতি দেওয়া হবে না।সকাল ৭ টা থেকে সকাল ১০ টা পর্যন্ত দোকান, বাজার, হাট খোলা রাখা যাবে। বিকেল ৫ টা থেকে সন্ধ্যা ৭ টা পর্যন্ত দোকান খোলা রাখতে পারবেন। তবে সোনার দোকান দুপুর ১২ টা থেকে দুপুর ৩ টে খোলা রাখা যাবে। শুধুমাত্র সোমবার থেকে শুক্রবার খোলা যাবে সোনার দোকান।
ওষুধ দোকান, মুদিখানা দোকান, দুধের দোকান, মিষ্টির দোকান-সহ স্বাস্থ্য, দমকল, বিদ্যুতিক, টেলিকম এবং পুর পরিষেবার সঙ্গে যাবতীয় দোকান সেই বিধিনিষেধের আওতায় পড়বে না। অনলাইন সার্ভিস এবং হোম ডেলিভারিতে ছাড় আছে।
বিমানযাত্রা শুরুর ৭২ ঘণ্টার মধ্যে টেস্ট করতে হবে। যদি কোনও যাত্রী টেস্ট না করিয়ে আসেন, তাহলে তাঁকে ১৪ দিনের নিভৃতবাসে থাকতে হবে। থাকা-খাওয়ার খরচ সংশ্লিষ্ট যাত্রীকে দিতে হবে।
ভিন রাজ্য থেকে কলকাতায় আগত বাস এবং দূরপাল্লার ট্রেনে আগত যাত্রীদের বাধ্যতামূলক আরটি-পিসিআর নেগেটিভ রিপোর্ট লাগবে। যাত্রা শুরুর ৭২ ঘণ্টার মধ্যে টেস্ট করতে হবে।
আপাতত ১৪ দিনের জন্য লোকাল ট্রেনের পরিষেবা বন্ধ করা হচ্ছে। সরকারি পরিবহনে ৫০ শতাংশ যাত্রী চলাচল করতে পারবে। মেট্রো চলবে। তবে তাতে ৫০ শতাংশ যাত্রী থাকতে পারবেন।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct