আহমদ মতিউর রহমান, ঢাকা: বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি (বিএনপি) চেয়ারপারসন ও দেশের তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার একটি ঠুনকো মামলায় আটক হওয়া ও কারাগারে যাওয়া ছিল বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি ভূমিকম্পের মতো ঘটনা। শেখ হাসিনা জামানায় জাতি এবং বিশ্ববাসী তা দেখেছে। ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় পাঁচ বছরের সাজায় কারাবন্দি হন খালেদা জিয়া। তার দল এ ব্যাপারে তেমন কোন প্রতিক্রিয়া দেখাতে র্ব্য হয়, কোন আন্দোলনও হয়নি। ফলে সরকারের প্রতি দৃশ্যমান কোন চাপ ছিল না। এরপর ৩০ অক্টোবর এ মামলায় আপিলে তার আরো পাঁচ বছরের সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর করেন হাইকোর্ট। এটা ছিল আরেকটি অভাবিত ঘটনা। উচ্চ আদালতে সাজা কমার বা খালাস পাওয়ার নজির অজস্র , বৃদ্ধির নজির খুবই কম। বাংলাদেশে সেটাই হচ্ছে এবং এখনো হয়ে চলেছে। অভিযোগ আছে আওয়ামী লীগ সরকার কর্তৃত্ববাদী সরকার হিসেবে দেশ চালাচ্ছে এবং দেশে কার্যত আইনের শাসন নেই বরং ভয়ের একটি সংস্কৃতি চালু হয়েছে। মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলোর অভিমত সেখানে সরকারের ভয়ে আদালত কাবু, যার ফল উচ্চ আদালতের এসব রায়। একই বছরের ২৯ অক্টোবর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে সাত বছরের সশ্রম কারাদ-ের আদেশ দেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫। রায়ে সাত বছরের কারাদ- ছাড়াও খালেদা জিয়াকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। এর পর আসে করোনা মহামারী। করোনা মহামারীর মধ্যে বিএনপির নেতারা দলীয় চেয়ারপারসনের মুক্তির জোর দাবি তোলেন। পরিবারের পক্ষকেও খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানানো হয়। এরপর শর্তসাপেক্ষে মুক্তির সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ওই সময়ে জানান, বর্তমান পরিস্থিতিতে (করোনাভাইরাস) সরকার বয়স বিবেচনায় মানবিক কারণে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তার সাজা ছয় মাসের জন্য স্থগিত াকবে। তিনি বাসায় েেক চিকিৎসা নেবেন এবং বিদেশ যেতে পারবেন না, এমন শর্তে সাজা স্থগিত াকবে। এরপর খালেদা জিয়াকে ২ বছরের বেশি সময় কারাগারে থাকার পর মুক্তি দেয়া হলে গত বছরের ২৫ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয় মেডিক্যাল হাসপাতাল েেক মুক্তি পেয়ে বাসায় ফেরেন তিনি। ২০২০ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়ার প্রম দফার মুক্তির মেয়াদ শেষ হয়। এর পর আরো ছয় মাসের জন্য খালেদা জিয়ার মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হয়। এখন সেই মুক্তির মেয়াদও আগামী ২৫ মার্চ শেষ হচ্ছে। এ জন্য সাজা স্থগিতের মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য পরিবারের পক্ষ েেক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে এই আবেদন কি গৃহীত হবে না আবার খালেদাকে জেলে যেতে হবে। সরকার তার দলের প্রতি খড়গহস্ত এটা বোঝা যাচ্ছে সামপ্রতিক কয়েকটি ঘটনায়। দলের নেতা কর্মীরা বাড়িতে াকতে পারেন না। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নিলেও সরকারী দলের সমান সুযোগ পান না দলের র্প্রাীরা। ফল পরাজয়েরর পর পরাজয়। এ প্রেক্ষিতে দলটি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দলের প্রতিষ্ঠাতা সাবেক জনপ্রিয় প্রেসিডেন্ট শহীদ জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতা যুদ্ধের সেকটর কমান্ডার হিসেবে পাওয়া বীরত্বসূচক উপাধি বা গ্যালেন্টরি এওয়ার্ড ‘বীর উত্তম’ (যা দিয়েছিলেন শেখ হাসিনার পিতা তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান) ছিনিয়ে নিতে সরকার মরীয়া। দেশের বিভাগীয় পর্যায়ে বড় সমাবশে করতেও বাধা দিচ্ছে সরকারী দল ও তাদের সমর্থকরা। অতীতের নজির কাটিয়ে তার দল এ বছর ৭ই মার্চ পালন করলেও সরকার দলীয় সাধারণ সম্পাদক ও মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের তার মধ্যেই ষড়যন্ত্র খুঁজছেন। ৭ মার্চ শেখ মুজিবের ঐতিহাসিক ভাষণ দেয়ার দিন, এটা এত দিন শুধুমাত্র আওয়ামী লীগই পালন করে এসেছে। এসব কারণে বিশ্লেষকরা ভেবে পাচ্ছেন না সরকার খালেদার কারাগারের বাইরে থাকার বিষয়টি প্রলম্বিত করবে কিনা।
তবে এ প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, খালেদা জিয়ার ভাই শামীম এস্কান্দার আবেদনটি গত মঙ্গলবার আমার হাতে দিয়েছেন। এতে শর্ত শিথিল করারও আবেদন করা হয়েছে। আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সিদ্ধান্ত জানাব। এ ব্যাপারে আইন মন্ত্রণালয়ের সাথে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত জানাবে সরকার। মন্ত্রী বলেন, আবেদনে সাজা মওকুফ করে উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়ার কথা বলা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানবতার জননী। আমরা আশা করছি, তিনি বিষয়টি ইতিবাচকভাবে নেবেন। তিনি এসব কথা বলেছেন বটে কিন্তু শেষ সিদ্ধান্ত কর্তৃত্ববাদী সরকার প্রধানের হাতেই।
খালেদা জিয়ার দিন কাটছে যেভাবে
৭৬ বছর বয়সী বেগম খালেদা জিয়া বর্তমানে গুলশানে তার ভাড়া বাসা ‘ফিরোজায়’ রয়েছেন। তিনি আর্থ্রাইটিসের ব্যা, ডায়াবেটিস, চোখের সমস্যাসহ বার্ধক্যজনিত নানা সমস্যায় ভুগছেন। বলতে সেখানেও একাকী জীবনই কাটাচ্ছেন। দলীয় নেতা কর্মীরা চাইলেই দেখা করতে পারেন না। কারণ সরকারের নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়া মুক্তি পেলেও কিছু শর্ত জুড়ে দেয়া হয়। ওই শর্তের মধ্যে রয়েছে, জামিনে থাকাকালীন তিনি চিকিৎসার জন্য বিদেশ যেতে পারবেন না। গুলশানের বাসায় েেকই চিকিৎসা নিতে হবে। তাই খালেদা জিয়া চাইলেও বিদেশ যেতে পারছেন না। দলীয় কর্মকান্ডে জড়িত হওয়ার বিষয়েও কিছু কড়াকাড়ি রয়েছে। তার কোন বক্তব্য বিবৃতিও প্রচার হতে দেখা যাচ্ছে না। বিদেশী অতিথিদের সঙ্গেও তার সাক্ষাতে বিধিনিষেধ রয়েছে। বিদেশে যেতে হলে এ জন্য তাকে সরকারের কাছে আবেদন করতে হবে। সরকার অনুমতি দিলেই শুধু তিনি বিদেশ যেতে পারবেন। তাই তার বিদেশ যাওয়াটা অনেকটা সরকারের ইচ্ছার ওপর নির্ভর করছে। আবার যদি কারাগারে ঢুকতে হয় সে সুবিধা থেকে তিনি বি ত হবেন সে কথা বলাই বাহুল্য ।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct