সাদ্দাম হোসেন মিদ্দে, ভাঙড়: একুশের প্রার্থী তালিকায় নাম নেই আরাবুল-সোনালির। সংবাদ মাধ্যমের কাছে কথা বলতে গিয়ে চোখ ছলছল ভাঙড়ের আরাবুল ইসলামের। চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি সাতগাছিয়ার সোনালি গুহ বোস। প্রার্থী হবেন প্রত্যাশা ছিল আরাবুল- সোনালিদের। অনুগামীদের মধ্যেও ছিল প্রত্যাশা। আরাবুল ইসলাম- সোনালি গুহ বোসরাও ভেবেছিলেন তৃণমূল কংগ্রেস ভাঙড় ও সাতগাছিয়ায় তাঁদের প্রার্থী করবেন। কিন্তু না ভাঙড় কিংবা সাতগাছিয়া তো নয়ই, অন্য কোনো কেন্দ্র থেকেও প্রার্থী করা হয়নি দোর্দন্ডপ্রতাপ তৃণমূল নেতা কিংম্বা শক্তপোক্ত নেত্রীকে।শুক্রবার দুপুর দুটায় তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কালিঘাটের বাড়ীতে শুরু হয় সাংবাদিক সম্মেলন। উক্ত সম্মেলন থেকে থেকে বিকাল চারটা নাগাদ একে একে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হয়। সেখানে দেখা যায় দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা তথা বাংলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন ক্ষেত্র ভাঙড়ে প্রার্থী হয়েছেন ডা. রেজাউল করিম। ডা. করিম গত লোকসভায় বাম প্রার্থী হিসাবে বীরভূম কেন্দ্র থেকে ভোটে লড়ে হেরে যান। সম্প্রতি তিনি তৃণমূল দলে যোগ দেন। সাতগাছিয়াতে দেখা যায় মোহন চন্দ্র নস্করের নাম। সোনালী গুহ বোস এদিন সংবাদমাধ্যমের কাছে কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, ‘আমি তো কোনদিন দিদিকে ছেড়ে যাইনি। দিদি আমাকে ছেড়ে দিলো। যিনি প্রার্থী হয়েছেন তাঁকে কেউ চেনেন?’ ভাঙড়ে রেজাউল করিমের নাম ঘোষণা হতেই প্রার্থীর বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়ে ফেসবুক ওয়াল ভরান তৃণমূল কর্মী-সমর্থক থেকে সাধারণ মানুষ। বহিরাগত প্রার্থীর বিরুদ্ধে সবাই জোরালো প্রতিবাদ শুরু করেন। এক্ষেত্রে তাঁরা বহিরাগত ভাঙড়ের প্রাক্তন বিধায়ক আব্দুর রেজ্জাক মোল্লার প্রসঙ্গ টেনে আনেন। রেজ্জাকের মতো করিমকেও দেখা যাবে না বলেও তাঁদের আশঙ্কা। অনেকে ঘোষণা করেন সারাজীবন তৃণমূল করেছি, তবে এবার আর তৃণমুলকে ভোট দেওয়া সম্ভব নয়। অনেকে আরাবুল ইসলামকে দল ছাড়ার জন্য আবেদন করেছেন।
এদিনের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ বিষয়টি হল আরাবুল ইসলামের একটি ফেসবুক পোস্ট। সেখানে তিনি লেখেন,” দলের আজকে আমার প্রয়োজন ফুরালো! অপরদিকে সংবাদমাধ্যমের কাছে কথা বলতে গিয়ে ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করেন আরাবুল ইসলাম। কথা বলার সময় তাঁর গলা বুজে আসছিল। কাঁদতে দেখা যায় অনুগামীদেরকেও। তখন যেন বেজে ওঠে বিষাদের করুন সুর। সংবাদ মাধ্যমের কাছে আরাবুল বলেন, “আমি দলটাকে বুকে আঁকড়ে এগিয়ে নিয়ে গেছি। ভাঙড়ের মানুষ কান্নায় ভেঙে পড়েছে। আমি কর্মী-সমর্থকদের জন্য আরাবুল ইসলাম হয়েছি। তাঁরা যা চাইবেন আমি তাই করবো। তৃণমূল দলকে যাঁরা বেশি ভালো বাসেন তাঁরাই বঞ্চিত।” রেজাউল করিমের হয়ে প্রচার করবেন? এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ’আমি দলের হয়ে কোন প্রচার করবো না। তারপরও কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে বসব। তাঁরা যা সিদ্ধান্ত দেবেন সেটাই করবো। রেজাউল করিম হোক আর যে লর্ড সাহেব হোক সে বুঝবে। আর ভাঙড়ের মানুষ তার জবাব দেবে।’
আরাবুল ইসলামের নাম প্রার্থী তালিকায় না দেখে ফেসবুকেই সীমাবদ্ধ থাকেননি অনুগামীরা। তাঁরা ভিড় জমান আরবাবুলের পাওয়ার গ্রিড সংলগ্ন পোলেরহাট ২ অঞ্চলের গাজীপুরের বাড়িতে। তারপর তাঁরা রাস্তায় নেমে পড়েন। ব্যারিকেড করে আটকানো হয় হাড়োয়া রোড। জ্বালানো হয় টায়ার। আগুন জ্বলে নিউটাউন লাগোয়া হাতিশালা মোড়ে।
শুক্রবারের দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলা দেখল আগুন, শুনলো বিষাদের সুর। কেঁদে ভাসালেও সোনালির মুখে ইঙ্গিতপূর্ণ কোন মন্তব্য শোনা যায়নি। তবে আরাবুলের কথাতে ইঙ্গিত স্পষ্ট। তৃণমূলের ‘তাজা নেতা’ তাহলে কি এবার অন্য নৌকায় চড়বেন? জল্পনা চলছেই।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct